এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: রাত বিরেতে কখনও শাসকদলের নেতার বাড়িতে কড়া নাড়ছেন তিনি। কখনও গভীর রাতে 'প্রাইভেট নম্বর' থেকে ফোন করছেন প্রাক্তন সহকর্মীদের। উদ্দেশ্য, তৃণমূলের ঘর ভাঙানো। এ যেন অনেকটা আশি-নব্বইয়ের দশকের ময়দান। ফুটবলার নিয়ে দুই প্রধানের 'কাড়াকাড়ি'র চেনা গল্প। ভোটের আগে নিজের 'টিম' শক্তিশালী করার সেই একই কায়দায় আসরে নেমেছেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়। জোর গলায় বলে চলেছেন, 'আগে দেখুন কী হয়! তৃণমূলের বহু নেতা নেতা আমার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।'নিজে ঠিকানা বদলেছেন। সবুজ থেকে মুকুল এখন গেরুয়া। কিন্তু যখন যে রঙেই থাকুন না কেন, অন্যের ঘর ভাঙায় তাঁর জুড়ি মেলা ভার।তৃণমূলে থাকার সময় তিনি বিরোধীদের ডেরায় কার্যত ছিপ ফেলে বসে থাকতেন। তাঁর হাত ধরে অন্তত এক ডজন নেতা বাম-কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে এসেছিলেন। মুকুলের 'কারসাজি'তেই বহু বাম-কংগ্রেস পরিচালিত পুরসভা, জেলা পরিষদের পাশা উল্টে গিয়েছিল নিমেষে। বিজেপিতে নাম লিখিয়ে সেই মুকুল এখন অর্জুন সিংয়ের মতো 'হেভিওয়েট'কে তৃণমূল থেকে নিজের দলে নিয়ে এসে 'কৃষ্ণ' নামে খ্যাত হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত তিনি তৃণমূলের আর কোনও তাবড় নেতাকে বিজেপিতে নিয়ে আসতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কিন্তু মুকুল রায়ের সৌজন্যেই যে ভোটের আগে একাধিক 'হাই-প্রোফাইল' তৃণমূল নেতার দলবদল ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে জল্পনা তুঙ্গে উঠেছে, তাতে অন্তত কোনও সংশয় নেই।রাজ্য-রাজনীতিতে দলবদল নতুন কোনও বিষয় নয়। তবে 'দলবদল' শব্দটা এই সেদিনও গড়ের মাঠেই একচেটিয়া ছিল। ভোটের আগে এবং ৬০-৭০-এর দশকে বিধানসভায় সংখ্যা গরিষ্ঠতা প্রমাণের তাগিদে তা আকছার হত। কিন্তু মুকুলের সৌজন্যেই তা গোটা বছরের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে পরিণত হয়েছে। এক কংগ্রেস নেতার কথায়, 'মুকুল তৃণমূলে থাকার সময় ভয়ে ভয়ে থাকতাম, এই বুঝি মুকুল এল! আজও আমার সেই ভয় কাটেনি।' সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর কথায়, 'এটাকে আমরা নিছক মুকুলের বিষয় হিসেবে দেখছি না। দল কী ভাবে গণতন্ত্রকে দেখে, তার উপর গোটা বিষয়টা নির্ভর করে। অন্য রাজ্যে ভোটের আগে দলবদলের হিড়িক দেখলে হাসাহাসি করতাম। তৃণমূল-বিজেপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তাই মুকুলদের দলবদলের রাজনীতি মান্যতা পাচ্ছে।' মুকুল নিজে অবশ্য বলছেন, এ সব আসলে গণতন্ত্র বাঁচানোর সংগ্রাম। তাঁর কথায়, 'পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য রাস্তায় নেমেছি। অনেকের সঙ্গে পথে দেখা হচ্ছে। তাঁরাও আমাদের সঙ্গে সামিল হচ্ছেন সংগ্রামে।'তৃণমূলের থাকার সময়েও মুকুলের দল ভাঙানোর ভূরিভূরি নজির আছে। তৃণমূলের টিকিটে এ বছর বর্ধমান-পূর্ব থেকে লড়ছেন সুনীল মণ্ডল। ঘাসফুলে যোগ দেওয়ার আগে তিনি ছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লকে। বামফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে ভোটে জিতে একসময় গলসির বিধায়কও হয়েছিলেন। শোনা যায়, সুনীলকে তৃণমূলে নিয়ে আসার পিছনে কাজ করেছিল মুকুলের মস্তিষ্ক। আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল নেতা দশরথ তিরকেও আগে ছিলেন আরএসপিতে। ২০১৪-এর পর এ বছরও তিনি তৃণমূলের টিকিটে লোকসভা ভোটে লড়ছেন। দশরথেরও তৃণমূলে আসার পিছনে মুকুলের গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে। মুর্শিদাবাদের তাবড় কংগ্রেস নেতারা ঘনিষ্ঠ মহলে বলেন, বিধায়ক ইমানি বিশ্বাস দলবদল করে তৃণমূলে ভিড়েছিলেন মুকুলের 'প্ররোচনাতেই'।বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সেই আশায় বুক বেঁধেই মুকুলকে সাদরে বরণ করেছিলেন বছর দেড়েক আগে। কারণ, তৃণমূলের অন্দরে ফাটল ধরানোর মতো আরও কোনও নেতার হদিস তাঁদের কাছে ছিল না।লোকসভা ভোটের মুখে তৃণমূলের অন্দরে কিছুটা হলেও যে 'সন্দেহের আবহ' তৈরি হয়েছে, সেটাও বিজেপির কাছে কম প্রাপ্তি নয়। বুধবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই সাংবাদিক বৈঠকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, টিকিট না পেয়ে দু-একজন বিজেপিতে চলে গেলে তাঁদের কিছু এসে যায় না। এর পরই দিল্লি গিয়ে বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন অর্জুন। মুকুলের এক প্রাক্তন অনুগামীর কথায়, 'দল ভাঙানোর খেলায় দাদা সিদ্ধহস্ত। অনেক সাংসদ-বিধায়ক মুকুলদার হাত ধরেই অন্য দল থেকে তৃণমূলে এসেছিলেন। বিলক্ষণ মনে আছে, তৃণমূলে আসতে চাইছেন না বলে মুকুলদা তৎকালীন এক কংগ্রেস নেতার বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়েছিলেন। এখন দাদার হাত ধরে যাঁরা বিজেপিতে গিয়েছেন, তাঁদের কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা নিয়ে ঘুরতে হচ্ছে। এইটুকুই তফাত।'
from Eisamay https://ift.tt/2HmK4Wy
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
Author Details
I am an Executive Engineer at University of Barishal. I am also a professional web developer and Technical Support Engineer.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন