পরিবারগুলো বড় অসহায়
রুদ্র রুহান‘‘তিন দিন ধইর্যা দেওইতে (বৃষ্টি) ভিজি, চুলা জ্বলে না, থাহার জাগা নাই মোগো, মোরা কুম্মে যামু বাবা এট্টু কইয়া দেন’’- এমন আকূতি রাশিদার।
কোলে এক বছর বয়সী নাতনি; স্বামীহারা রাশিদা তার মেয়ের স্বামীর সঙ্গে আশ্রয় নিয়েছিলেন বরগুনা পৌরসভার বড়িয়ালপাড়ায় ভাড়ানী খালের তীরে। ছোট্ট একটি ঘরে গাদাগাদি করে থাকতেন।
রাশিদার মতো আরো অনেক ভূমিহীন পরিবার ঠাঁই নিয়েছিলেন এই খালের পাড়ের সরকারি জমিতে। কিন্তু উচ্ছেদের কবলে পড়তে হয়েছে তাদের।
দুই শতাধিক ভূমিহীন পরিবার এখন মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু হারিয়ে কেউ সড়কের পাশে খুপড়ি পেতেছেন; কেউ টিনের ছাপড়া দিয়েছেন; আবার কেউ দুটি ঘরের মাঝের গলিপথে বিছানা পেতেছেন। তীব্র শীতের মধ্যে আশ্রয়হীনরা দুর্বিসহ জীবনযাপন করছেন; বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা।
নদী, খাল ও জলাশয় দখলমুক্ত করতে বরগুনা জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ভাড়ানী খালের দুই পাড়ে গত ৩০ ডিসেম্বর থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। এর আওতায় বুধবার ও বৃহস্পতিবার পৌর শহরের বড়িয়ালপাড়ায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়।
রোববার দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উচ্ছেদ হওয়া পরিবারের অনেকগুলো বেড়িবাঁধের সড়কের পাশে কোনোমতে আশ্রয় নিয়েছে। খোলা আকাশের নিচে চুলায় হাড়ি পেতে রান্না করছে।
এ সময় কথা বলতে গেলে বৃদ্ধা ফাতেমা বেগম কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘‘আমি স্বামী হারা; ছেলে-বউয়ের সঙ্গে বসবাস করতাম। কিন্তু সেই আশ্রয়টুকুও এখন আর নেই। আমরা এখন কোথায় যাবো?’’
আবুল কালাম বলেন, ‘‘মোরা কি রোহিঙ্গাগো চাইতেও খারাপ! মোগো লইগ্গা আল্লার দুনিয়ায় কি থাহার মতো এট্টু জাগা নাই?’’
বরগুনা পাবলিক পলিসি ফোরামের সভাপতি হাসানুর রহমান বলেন, তার জানামতে ভূমিহীনদের জন্য সরকারি আবাসন প্রকল্পে ঘর বরাদ্দ ছিল। এরা কেউ কেউ সেই ঘর বিক্রি করে খালের পাড়ে আশ্রয় নেন। যদিও তারা অবৈধভাবে সরকারি জমিতে বসবাস করতেন, তবুও একটু আশ্রয় তাদের প্রাপ্য।
যোগাযোগ করা হলে বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুমা আক্তার বলেন, ভাড়ানী খাল দখলমুক্ত করতে নিয়মানুসারে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করা হয়েছে। এদের কেউ যদি নিরাশ্রয় ভূমিহীন হন, তারা আশ্রয়ের জন্য আবেদন করলে বিবেচনা করা হবে।
বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, যদি প্রকৃত ভূমিহীনদের কেউ আশ্রয়ন প্রকল্পে আসতে চান, তবে ব্যবস্থা করা হবে।
ঢাকা/বকুল
from Risingbd Bangla News https://ift.tt/2QxJLMl
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন