পর্যটন নিয়ে ঢালাওভাবে কাজ করতে চাই: ঐশি
ইবনুল কাইয়ুমট্যুরিজম নিয়ে প্রতিযোগিতার আসর বসেছিল ফিলিপাইনে। সেখানে সারা বিশ্বের প্রতিযোগীদের হারিয়ে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট ছিনিয়ে এনেছেন বাংলাদেশের ফারহানা আফরিন ঐশি। মিসেস ট্যুরিজম বাংলাদেশ ২০১৯ এবং মিসেস ট্যুরিজম গ্লোব ২০১৯ জয় করে দেশের গৌরবের মুকুটে নতুন পালক যুক্ত করেছেন এই গুণী। এখন দেশের পর্যটন নিয়ে ঢালাওভাবে কাজ করতে চান তিনি।
সম্প্রতি মিরপুরে রাইজিংবিডির নিজস্ব কার্যালয় পরিদর্শন করেন ঐশি। সেখানে পর্যটনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা হয় রাইজিংবিডির জ্যেষ্ঠ সহ সম্পাদক ইবনুল কাইয়ুম সনির সঙ্গে। পর্যটন নিয়ে নিজের পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে উঠে আসে আলাপনে। এ নিয়ে ঐশির পরিকল্পনা ও ইচ্ছের কথা রাইজিংবিডির পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো—
আমাদের দেশে খুব কম মানুষ বা প্রতিষ্ঠান পর্যটন নিয়ে কাজ করে। যারা করে তাদের বেশিরভাগই সুপরিচিত নয়। দেশের জনগণের কাছে যারা পরিচিত এবং বিদেশেও যাদের পরিচিতি আছে, তারা এ সেক্টরে কাজ করলে ভালো হয়।
আমি মিসেস ট্যুরিজম গ্লোব টাইটেল উইনার, আমি যদি কোনো কিছু বলি মানুষ সেটাতে আগ্রহ প্রকাশ করবে বলে মনে করি। সুপরিচিতরা এই সেক্টরে কাজ করতে এগিয়ে এলে সেক্টরের আরো উন্নতি হবে। কাউকে নির্দেশনা দিতে এগিয়ে আসতে হবে। সেখানে সঠিক পরিকল্পনা এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকতে হবে। আমি এই জায়গায় আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করে যেতে চাই।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ট্যুরিজম করপোরেশন আমাকে অ্যাম্বাসেডর করতে চেয়েছে। সেটা সম্পন্ন হলে দেশের ৬৪ জেলা ঘুরে ঘুরে ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করব। অন্যান্য দেশে মানুষ ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করে ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার করে। আমাদের দেশের সুপরিচিত জায়গাগুলো ছাড়াও এমন অনেক জায়গা আছে যেগুলো নিয়ে কাজ করা দরকার। সেসব স্থান চিহ্নিত করে ভিডিও ডকুমেন্টরি তৈরি করে ইউটিউবে প্রচার করতে হবে। এতে দেশীয় পর্যটক ছাড়াও বিদেশি পর্যটক বাড়বে।
অনেক সময় আমরা কিছু পড়ার চেয়ে দেখতে ভালোবাসি। এখন ইউটিউবের যুগে সবাই একটা আর্টিকেল পড়ার চেয়ে সেই বিষয়ে একটা ডকুমেন্টরি দেখতে পছন্দ করে।
ট্যুরিজম নিয়ে আমার এমন একটি পরিকল্পনা আছে। ধরুন, কোথাও যাচ্ছি, সেই বিষয়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটা ৩৬০ ডিগ্রি ভিডিও তৈরি করা এবং ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার করার ইচ্ছা আছে। এটা অনেককেই দেশের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখতে উৎসাহী করে তুলবে।
এখন ঘুরতে যাওয়া মানে সবার ধারণা দেশের বাইরে ঘুরতে যেতে হবে। এটা বিরাট একটা ব্যাপার বলে মনে করেন অনেকে। হ্যাঁ, বিদেশেও ঘুরতে যেতে হবে। তবে আমাদের দেশেই এমন অনেক জায়গা আছে, যেগুলোর সঙ্গে বিদেশের অনেক জায়গার সঙ্গে দারুণ মিল রয়েছে। অথচ মানুষ সেখানে ঘুরতে যায় না। আমি মনে করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এদিকে নজরদারি বাড়ালে, সেসব জায়গা নিয়ে প্রচার-প্রচারণা হলে মানুষের আগ্রহী হবে। দেশের টাকা দেশেই থাকবে। উপরন্তু বিদেশি পর্যটক বাড়লে বৈদেশিক মুদ্রাও উপার্জন হবে।
আমাদের দেশের হাওরাঞ্চলে পর্যটনের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। অথচ এ সেক্টরটিতে এখনো তেমন কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। সুন্দরবন বা কক্সবাজার নয়, দেশের এমন অনেকগুলো স্থান আছে যেগুলো এখনো পর্যটনের আওতায় আসেনি। এগুলো চিহ্নিত করে কাজ করা দরকার। আসলে ট্যুরিজম সেক্টর নিয়ে ঢালাওভাবে কাজ করা দরকার। এর সাথে সাধারণ জনগণকেও সংযুক্ত করতে হবে। তা না হলে এটা যে একটা সম্ভাবনাময় খাত, তা কেউ উপলব্ধি করতে পারবে না। পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে সুযোগ সুবিধা বাড়াতে হবে। এগুলো নিয়ে কাজ করতে চাই।
শুধু ভ্রমণ নয়, আমাদের পর্যটনকেন্দ্রগুলোর পরিবেশ নিয়েও কাজ করার ইচ্ছে আছে। একজন পর্যটক কীভাবে সেখানে যাবে, কী খাবে, কোথায় থাকবে, তার নিরাপত্তা কেমন হবে ইত্যাদি নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের সাহায্য দরকার হবে। এসব সেক্টরেও ঢালাওভাবে কাজ করার প্রয়োজন রয়েছে বলে আমি মনে করি।
দেশের ৬৪ জেলা ঘোরা শেষ হলে আমার ওয়ার্ল্ড ট্যুর দেয়ার ইচ্ছে আছে। আমি ফিলিপিন্স-এ উইনার। এটা একটা ইন্টারন্যাশনাল সেট আপ। উইনার হিসেবে তারা এ ব্যাপারে আমাকে অনেক সাহায্য করবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তারা পেটেন্ট করে। এবার থাইল্যান্ডে হচ্ছে, আগামীতে অস্ট্রেলিয়া বা সাউথ আফ্রিকায় হবে। তো বিভিন্ন জায়গায় যখন পেটেন্ট হয়, সেখানে আমাদেরকে জাজ হিসেবে ডাকা হয়। সেসব জায়গায় আমার দেশকে কীভাবে প্রমোট করা যায় সেটা নিয়ে কাজ করব। বিদেশিদের জানাতে চাই, বাংলাদেশেও চমৎকার ট্যুরিজম স্পট আছে, যেগুলো তোমরা ঘুরে দেখতে পারো।
পর্যটন কর্পোরেশনের অ্যাম্বাসেডর হয়ে গেলে তখন আমার কাজের সুবিধা হবে। আমি তখন সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে হেল্প নিতে পারব। এটা নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে কথা বলা সম্ভব হলে আরো সহায়তা পাওয়া যাবে বলে মনে করি।
এক নজরে ঐশি
ঐশির জন্ম ঢাকায়। বাবার গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের শিবচরে। ছোটবেলা থেকেই কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের সঙ্গে যুক্ত। সেখানেই কত্থক নাচ এবং গানে হাতেখড়ি। আপাতত অভিনয়ে আগ্রহ নেই, তবে প্লে-ব্যাক করার ইচ্ছে আছে।
স্বামী আরিফ মোতাহারের লেখা এবং হৃদয় খানের সুর করা একটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। একমাত্র ছেলেকে নিয়ে সেই গানের মিউজিক ভিডিওতে মডেলও হয়েছেন। আগামীতে ফ্যাশন ডিজাইনিং বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নেয়ার ইচ্ছে আছে তার।
ঢাকা/সনি/শান্ত
from Risingbd Bangla News https://ift.tt/2QvoVNx
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন