এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: শিক্ষার ভারই ঠেলে দিল মৃত্যুর মুখে।একটি জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে স্কুলের শিশুরা ভারোত্তলক নয় বলে বছরখানেক আগে মন্তব্য করেছিল মাদ্রাজ হাইকোর্ট। আদালতের এই পর্যবেক্ষণে গভীর দুশ্চিন্তা লুকিয়ে ছিল। সেই দুশ্চিন্তা যে অমূলক নয়, তার প্রমাণ মিলল লিলুয়ায়। পিঠে বইয়ের ভারি ব্যাগ নিয়ে স্কুলের পাঁচতলার সিঁড়ি থেকে বিপজ্জনক ভাবে পড়ে গুরুতর জখম হল এক ছাত্রী। লিলুয়ার অগ্রসেন বালিকা শিক্ষাসদনের দশম শ্রেণির ছাত্রী প্রিয়াঙ্কা ভঞ্জচৌধুরী এখন আশঙ্কাজনক অবস্থায় কলকাতার আলিপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মঙ্গলবার তার মেরুদণ্ডে বড়সড় অস্ত্রোপচার হয়েছে। কয়েকদিন না গেলে সঙ্কট কেটেছে কি না তা বলা সম্ভব নয় বলেই হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে।মঙ্গলবার সকালে এ নিয়ে অভিভাবকরা স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করেন। প্রচুর বই নিয়ে ক্লাসে আসার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে যে জোরাজুরি চলে তা অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানান সকলে। অভিভাবকদের নালিশ, প্রতিদিন ছাত্রীদের অন্তত ১৫ কেজির বোঝা পিঠে নিয়ে স্কুলে আসতে হয়। সঙ্গে থাকে প্রত্যেক বিষয়ের জন্য একাধিক খাতা ও প্রোজেক্টের সামগ্রী। সোমবার সকালে পিঠের ওই ভারি বইয়ের ব্যাগ সামলাতে না পেরেই প্রিয়াঙ্কা সিঁড়িতে পড়ে গিয়ে মেরুদণ্ডেও পায়ে গুরুতর চোট পায় বলে জানান অভিভাবকরা।প্রিয়াঙ্কার বন্ধুরা জানিয়েছে, দুর্ঘটনার পরপরই ওর একদিকের পা অসাড় হয়ে যায়। আংশিক সঙ্গাহীন হয়ে পড়ে প্রিয়াঙ্কা। স্কুল থেকে ফোনে গেলে প্রিয়াঙ্কার মা চলে আসেন। প্রথমে মিন্টোপার্কের একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখান থেকে তাকে ভর্তি করা হয় আলিপুরের হাসপাতালে। সেখানেই এ দিন মেরুদণ্ডে জটিল অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসকরা।মঙ্গলবারের অস্ত্রোপচারে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। অভিভাবকরাই দু’লক্ষ টাকা তুলে দিয়েছেন। প্রিয়াঙ্কার বাবা নেই। মায়ের পক্ষে মেয়ের চিকিৎসার খরচ একা বহন করা কার্যত অসম্ভব। প্রিয়াঙ্কার মা তাই চাইছেন, মেয়ের চিকিৎসায় টাকা দিক স্কুলও।প্রিয়াঙ্কার দুর্ঘটনা নিয়ে লিলুয়ার ওই বেসরকারি স্কুলে যোগাযোগ করলে নানা অছিলায় প্রথমে মুখ খুলতে রাজি হননি স্কুল কর্তৃপক্ষ। প্রথমে জানানো হয় স্কুলের প্রিন্সিপাল এসকে শ্রীবাস্তব বাইরে আছেন। ভাইস প্রিন্সিপাল(অ্যাকাডেমিক) কাকলি নাগ বলেন, ‘স্কুলের পরিচালন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা না বলে কিছু জানাতে পারব না।’ এক ঘন্টা পরে ফোন করতে বলেন তিনি। কিন্তু এরপর আর ফোন ধরেননি ভাইস প্রিন্সিপাল। স্কুলের চেয়ারম্যান বাসুদেব টিকমানি বলেন, ‘ছাত্রীর চিকিৎসার জন্য সাহায্য চেয়ে অভিভাবকরা আবেদন করলে আমরা বিবেচনা করতে পারি।’রাতে প্রিন্সিপাল ফোনে বলেন, ‘আমরা ছাত্রীদের ব্যাগে বেশি বই নেওয়ার চাপ দিই না। আর বইয়ের ভারেই যে ছাত্রীটি পড়ে গিয়েছে, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না।’অবশ্য চিকিৎসকদের বক্তব্য, ছোট থেকে অতিরিক্ত ভার বহনের কারণে অল্প বয়সেই ছাত্রছাত্রীদের মেরুদণ্ডে ও শরীরের অন্যত্র নানা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। স্কুলের বইয়ের ভার কমাতে কম বিতর্কও হয়নি রাজ্য ও জাতীয় স্তরে। গত বছর ২৯ মে মাদ্রাজ হাইকোর্টের রায়ে স্কুলের বইয়ের ভার নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখতে কেন্দ্রীয় সরকারকে বলা হয়েছিল। সেই মতো নভেম্বরে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রীয় বোর্ডগুলিকে স্পষ্ট নির্দেশিকা পাঠায়। কিন্তু সেই নির্দেশিকা মেনে স্কুলগুলি যে চলছে না, তা এই দুর্ঘটনাতেই স্পষ্ট।
from Eisamay http://bit.ly/2PowXFA
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
Author Details
I am an Executive Engineer at University of Barishal. I am also a professional web developer and Technical Support Engineer.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন