অনির্বাণ ঘোষব্যারাকপুরের বিএন বোস হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্ক থেকে ৫০ ইউনিট রক্ত আনাতে হল এনআরএস ব্লাডব্যাঙ্ককে। গত সোমবারের ঘটনা। তার চার দিন আগে, গত ৭ মার্চ তাদের ন্যাশনাল মেডিক্যালের ব্লাডব্যাঙ্ক থেকে আনাতে হয় ৭০ ইউনিট রক্ত। শিবিরের অভাবে এনআরএসের রক্ত সংগ্রহ কতটা তলানিতে, তা এই পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট৷ বরাবর এনআরএস থেকে মাসে ১৫০-২০০ ইউনিট রক্ত সিউড়ি, পুরুলিয়া, বাঁকুড়ায় যাওয়াই দস্তুর। অথচ এখন দেখা যাচ্ছে উলটপুরাণ! শুধু এনআরএস অবশ্য নয়। কমবেশি সব সরকারি ব্লাডব্যাঙ্কেই ভাটার টান রক্ত সংগ্রহে। ভোটের মরসুমে রক্তদান শিবির কমে আসার কারণেই এহেন সমস্যা। তবে নতুন নয়, আগেও এমন সঙ্কটের সাক্ষী থেকেছে স্বাস্থ্য দপ্তর। ভোগান্তি বেড়েছে রোগীকুলের। গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার তাই আগেভাগে বিশেষ পরিকল্পনা করে 'স্পেশ্যাল ড্রাইভ' আয়োজন করতে সব ব্লাডব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্যভবন। রাজ্য রক্ত সঞ্চালন পর্ষদের এক কর্তা বলেন, 'গত কয়েক দিনে ন্যাশনাল মেডিক্যাল, কামারহাটির সাগর দত্ত হাসপাতাল ও মানিকতলার সেন্ট্রাল ব্লাডব্যাঙ্কে বিশেষ বৈঠকে শিবির নিয়ে আলোচনা করা হয় উদ্যোক্তাদের সঙ্গে। বৃহস্পতিবার তেমনই একটি বৈঠক আয়োজন করা হয় এনআরএসে।' যদিও এনআরএস ব্লাডব্যাঙ্কের প্রতি বিরক্ত উদ্যোক্তাদের গরহাজিরায় সেই বৈঠক খুব ফলপ্রসু হয়নি এ দিন। ফলে দৈনিক গড়ে ১৫০ ইউনিট রক্তের চাহিদা রয়েছে থাকলেও, আগামী দিনে কী ভাবে পর্যাপ্ত রক্ত ও রক্ত-উপাদান রোগীদের জুগিয়ে উঠবে এনআরএস ব্লাডব্যাঙ্ক, তা নিয়ে তুমুল অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। কেননা, একে গরম। তায় শিয়রে ভোট। এ দিকে সিংহভাগ রক্তদান শিবির আয়োজন করে কোনও না কোন রাজনৈতিক দল বা তাদের শাখা সংগঠন, যারা এখন আর শিবির আয়োজন করে উঠতে পারছে না। ভোটের ব্যস্ততায় অনেক ক্লাবের তরুণরাও ব্যস্ত হয়ে পড়ায় তাদেরও শিবির আয়োজনে উৎসাহ নেই। তাই মোটের উপর শিবির কমে চলেছে লাগাতার। এনআরএস ব্লাডব্যাঙ্ক সূত্রে খবর, বরাবর যেখানে এক সপ্তাহে ২০-২২টি শিবির থাকে, গত সপ্তাহে সেখানে মাত্র ১১টি শিবির থেকে রক্ত সংগ্রহ করা গিয়েছে। ফি রবিবারেই শুধু যেখানে ছ'টি করে শিবির থাকে, সেখানে গত দু'টি রবিবার মিলিয়ে মোট পাঁচটি শিবির থেকে রক্ত সংগ্রহ করা গিয়েছে। অথচ রক্তের চাহিদা এতটুকু কমেনি বলে জানাচ্ছেন ব্লাডব্যাঙ্ক কর্তা ও রক্তদান আন্দোলনের কর্মীরা। এ দিকে জোগান তলানিতে ঠেকার জোগাড়। ফলে গত কয়েক দিন ৮০-৯০ ইউনিটের বেশি রক্ত রোগীকে দিয়ে উঠতে পারছে না এনআরএস ব্লাডব্যাঙ্ক। তা-ও ৩৫-৪০ জন রোগীর পরিজনের থেকে ব্লাডব্যাঙ্কেই রক্ত সংগ্রহ করে পরে সেই রক্ত অন্য রোগীকে দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি সামলাতে ন্যাশনাল, সাগরদত্ত, সেন্ট্রাল ব্লাডব্যাঙ্কের মতো এনআরএস ব্লাডব্যাঙ্কও বৈঠকে বসে এ দিন। লক্ষ্য ছিল, গ্রীষ্ম ও ভোটের জোড়া ফলার মোকাবিলা কী উপায়ে করা যায়, তার পরিকল্পনা করা। কিন্তু বীতশ্রদ্ধ উদ্যোক্তাদের অনুপস্থিতিতে সে বৈঠক হতশ্রী চেহারা নেয়। উদ্যোক্তাদের একাংশের অভিযোগ, প্রয়োজনের সময়ে শিবির আয়োজন করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা হয় না ব্লাডব্যাঙ্কের তরফে। উল্টে উদ্যোক্তাদের উৎসাহে বার বার জল ঢেলে দেন ব্লাডব্যাঙ্কেরই কয়েক জন আধিকারিক। শিবির আয়োজনের দায়িত্বপ্রাপ্ত এনআরএস ব্লাডব্যাঙ্কের মেডিক্যাল অফিসার ঈশিতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে তিনি নারাজ। ফোন এবং মেসেজের জবাব না-দেওয়ায় প্রতিক্রিয়া মেলেনি ব্লাডব্যাঙ্কের অধিকর্তা দিলীপকুমার পণ্ডারও। বৈঠকের ব্যর্থতার কথা অবশ্য মেনে নিয়েছেন এনআরএসের উপাধ্যক্ষ তথা সুপার সৌরভ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, 'উদ্যোক্তাদের অনেকেই কেন আসেননি, তা খোঁজ নেব। ওঁদের সঙ্গে কথা বলে অচিরেই ফের একদিন বৈঠক ডাকা হবে।'
from Eisamay https://ift.tt/2HmsMsK
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
Author Details
I am an Executive Engineer at University of Barishal. I am also a professional web developer and Technical Support Engineer.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন