মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জুকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর কথিত ষড়যন্ত্রের ঘটনাটি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ওয়াশিংটন পোস্টের এক বিশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, মুইজ্জুকে অভিশংসনের লক্ষ্যে মালদ্বীপের ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের ৪০ জন সংসদ সদস্যকে মোটা অঙ্কের ঘুষের প্রস্তাব দিয়েছিল ‘র’। তবে, পর্যাপ্ত সমর্থন না পাওয়ায় ভারতের এই পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত ভেস্তে যায়। মালদ্বীপের সরকার, বিরোধী দল, সামরিক বাহিনী ও পুলিশ ঐক্যবদ্ধভাবে এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে।
এই ঘটনাটি শুধু মালদ্বীপের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও গভীর প্রভাব ফেলেছে। মালদ্বীপের মতো একটি ছোট দ্বীপরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের মতো একটি প্রভাবশালী দেশের হস্তক্ষেপের চেষ্টা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছে।
আঞ্চলিক নিরাপত্তার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ:
আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য মালদ্বীপের চেয়ে বাংলাদেশ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই মন্তব্য বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বকে নতুন করে সামনে এনেছে। প্রশ্ন উঠেছে, মালদ্বীপে যদি এমন ষড়যন্ত্রের চেষ্টা চলে, তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভারতের কৌশল কী হতে পারে?
এই প্রসঙ্গে ড. ইউনুসের প্রসঙ্গও উঠে এসেছে, যা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারতের সম্ভাব্য হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত দেয়। মালদ্বীপের জন্য যদি ৬০ লক্ষ ডলার বাজেট হয়, তবে বাংলাদেশের মতো একটি বড় দেশের জন্য সেই বাজেট কত হতে পারে, তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে।
মালদ্বীপের প্রতিরোধ ও বাংলাদেশের প্রস্তুতি:
মালদ্বীপের সরকার, বিরোধী দল, সামরিক বাহিনী ও পুলিশ যেভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে ভারতের কথিত ষড়যন্ত্র প্রতিহত করেছে, তা একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশের সরকার, বিরোধী দল, প্রশাসন ও সামরিক বাহিনীও কি একইভাবে দেশপ্রেমের সাথে কাজ করে এমন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারবে?
এই ঘটনাটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করেন, এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশের উচিত অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং বৈদেশিক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকা।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:
মালদ্বীপের এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও গভীরভাবে নজর রাখছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই ঘটনা দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ভারতের মতো একটি দেশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠায় আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে।
মালদ্বীপের ঘটনাটি দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই ঘটনা আঞ্চলিক নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব এবং বৈদেশিক হস্তক্ষেপের মতো সংবেদনশীল বিষয়গুলো নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশের জন্য এই ঘটনা একটি সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করতে পারে, যাতে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখে বৈদেশিক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকা যায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন