নেপালের হিন্দু রাষ্ট্র পরিচয় নিয়ে আবারও বিতর্ক দানা বেঁধেছে। সম্প্রতি বলিউড অভিনেত্রী মনীষা কৈরালার একটি মন্তব্যকে ঘিরে এই বিতর্কের সূত্রপাত। মনীষা কৈরালা বলেছেন, নেপাল যখন হিন্দু রাষ্ট্র ছিল, তখন দেশটি আরও সমৃদ্ধ ছিল। তার এই মন্তব্যের পর নেপালের রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
মনীষা কৈরালার মন্তব্য:
মনীষা কৈরালা তার সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে লিখেছেন, "নেপাল যখন হিন্দু রাষ্ট্র ছিল, তখন দেশটি আরও সমৃদ্ধ ছিল। এটাই ছিল আমাদের সেরা পরিচয়। আমরা ছিলাম বিশ্বের একমাত্র হিন্দু রাষ্ট্র। কেন এই পরিচয় মুছে ফেলা হল?" তিনি আরও বলেন, "আমরা ছিলাম শান্তিপূর্ণ হিন্দু রাষ্ট্র। মাঝে মাঝে আমার মনে হয়, এটা ছিল ষড়যন্ত্র।"
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া:
মনীষা কৈরালার এই মন্তব্যের পর নেপালের রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। হিন্দুত্ববাদী দল রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টির (আরপিপি) নেতারা তার এই মন্তব্যকে সমর্থন করেছেন। আরপিপির নেতা কমল থাপা বলেছেন, "মনীষা কৈরালা নেপালের জনগণের মনের কথা বলেছেন। নেপালের অধিকাংশ মানুষ এখনও চান, দেশটি আবার হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হোক।"
তবে, নেপালের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো মনীষা কৈরালার এই মন্তব্যের বিরোধিতা করেছে। নেপালি কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রকাশ শরণ মাহাত বলেছেন, "নেপাল একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। এখানে সব ধর্মের মানুষ সমান অধিকার ভোগ করেন। মনীষা কৈরালার মন্তব্য নেপালের সংবিধানের পরিপন্থী।"
সামাজিক প্রতিক্রিয়া:
মনীষা কৈরালার এই মন্তব্যের পর নেপালের সামাজিক অঙ্গনেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো তার এই মন্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে, ধর্মনিরপেক্ষ সংগঠনগুলো তার এই মন্তব্যের বিরোধিতা করেছে।
নেপালের বিশিষ্ট সমাজকর্মী মোহনা আনসারি বলেছেন, "মনীষা কৈরালার মন্তব্য নেপালের সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট করতে পারে। নেপাল একটি বহু-ধর্মীয় দেশ। এখানে সব ধর্মের মানুষের সমান অধিকার রয়েছে।"
নেপালের হিন্দু রাষ্ট্র পরিচয়:
নেপাল দীর্ঘকাল ধরে একটি হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত ছিল। ২০০৬ সালে নেপালে রাজতন্ত্রের অবসানের পর, দেশটি একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত হয়। তবে, নেপালের অধিকাংশ মানুষ এখনও হিন্দু ধর্মাবলম্বী।
২০১৫ সালে নেপালের নতুন সংবিধান প্রণয়নের সময়, দেশটির হিন্দু রাষ্ট্র পরিচয় নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। হিন্দুত্ববাদী দলগুলো নেপালকে আবার হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণার দাবি জানায়। তবে, অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধিতার কারণে, নেপালকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
বিতর্কের কারণ:
নেপালের হিন্দু রাষ্ট্র পরিচয় নিয়ে বিতর্কের প্রধান কারণ হল দেশটির ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। নেপালের অধিকাংশ মানুষ হিন্দু ধর্মাবলম্বী এবং তাদের কাছে এই ধর্মীয় পরিচয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও, নেপালের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও হিন্দু ধর্মের সাথে গভীরভাবে জড়িত।
তবে, নেপালের সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাই, দেশটির হিন্দু রাষ্ট্র পরিচয় নিয়ে বিতর্ক এখনও অব্যাহত রয়েছে।
বিতর্কের প্রভাব:
নেপালের হিন্দু রাষ্ট্র পরিচয় নিয়ে বিতর্ক দেশটির রাজনীতি ও সমাজে গভীর প্রভাব ফেলেছে। এই বিতর্ক নেপালের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে। এছাড়াও, এই বিতর্ক নেপালের সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভবিষ্যৎ:
নেপালের হিন্দু রাষ্ট্র পরিচয় নিয়ে বিতর্ক ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। হিন্দুত্ববাদী দলগুলো নেপালকে আবার হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারে। তবে, অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো এবং ধর্মনিরপেক্ষ সংগঠনগুলো এর বিরোধিতা করবে।
এই বিতর্কের চূড়ান্ত পরিণতি কী হবে, তা এখনও বলা যাচ্ছে না। তবে, এই বিতর্ক নেপালের রাজনীতি ও সমাজে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন