বরিশালের টাইমস, জাতীয়, রাজনীতি, অর্থনীতি, সারা বাংলা, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, চাকরি, বিনোদন, সাতসতেরো, ক্যাম্পাস, অন্যান্য

Breaking

রবিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

প্রতিবন্ধী দুই সন্তান নিয়ে বিধবা মায়ের সংসার চলে ভিক্ষায়, নেই মাথা গোজার ঠাই!

প্রতিবন্ধী দুই সন্তান নিয়ে বিধবা মায়ের সংসার চলে ভিক্ষায়, নেই মাথা গোজার ঠাই!

জিয়াউল হক, বরিশাল। জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার পাদ্রীশিপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের মৃত খালেক হাওলাদার এর স্ত্রী নুরজাহান বেগম ১৫ বছর যাবত বিধবা। স্বামীর মৃত্যুর পর থেকেই ১৫ বছর যাবত ভিক্ষা করেই সংশার চলছে তার। নুরজাহান বেগমের বাবার বাড়ী বাকেরগঞ্জ পৌর এলাকার ৮ নং ওয়ার্ডে।

মৃত মো: মতি হাওলাদারের কন্যা নুরজাহান বেগম। তবে নুরজাহান বেগমের বর্তমানে কোনো জায়গা জমি নেই। ভূমিহীন ও গৃহহীন দুটোই নুরজাহান বেগম। দুটি ছেলে ও এক কন্যা সন্তান রয়েছে।

নাম মো: বাদশা (২৩) কন্যা রেসি (২০) ও বাদল(১৬) দুই পুত্র প্রতিবন্ধী। কন্যা রেসি কে বিয়ে দিয়েছেন রয়েছে স্বামীর বাড়িতে। দুই পুত্রের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অচল, অক্ষম। এখন নুরজাহান বেগম দুই প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডে বাবার বাড়িতে পরের জমিতে থাকেন একটি ঝুপড়ি ঘরে।

ভিক্ষা করে সংসার চলে নুরজাহান বেগমের। স্বামী: খালেক হাওলাদার ১৫ বছর আগে মারা যান। বিধবা নুরজাহান বেগমের একদিন সবই ছিল। লাল শাড়ি পরে বধূ সেজে স্বামীর সংসারে পা রেখেছিলেন। সুখ-দুঃখের দোলাচলে রঙিন স্বপ্নে বিভোর হয়ে কাটিয়ে দিয়েছেন কয়েকটি বছর।

স্বামী খালেক হাওলাদার দিনমজুরের কাজ করতেন। স্বামীর সান্নিধ্যে নুরজাহান যখন সংসার গোছাতে লাগলো বিধিবাম দুরারোগ্য ব্যাধিতে অকালেই খালেক হাওলাদার মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

স্বামীর চিকিৎসায় সামান্য জমি-জমা হাতছাড়া করে হয়ে পড়েন নিঃস্ব। স্বামী মারা যাওয়ার পর সংসারের হাল ধরতে গিয়ে পড়েন বিপাকে। উপার্জনক্ষম কেউ না থাকায় নুরজাহান বেগমের ঘাড়ে ওঠে ঋণের বোঝা। শুরু হয় কায়িক পরিশ্রম। বিভিন্ন বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

কাজ করানোর সুবাদে সবাই আদর-স্নেহও করতো। একপেট খাবার দিয়ে আদায় করে নিতো গৃহস্থালির নিত্যদিনের কাজ। কায়িক ও পারিবারিক পরিশ্রমে নুরজাহান দিন দিন দুর্বল হতে থাকে।

এভাবে কাটিয়ে দেয় বছরের পর বছর। ভিটে বাড়ী হারিয়ে বছরের পর বছর সময় ধরে ঠিকানাবিহীন চলছে এই নারীর সময়। স্বামীর বাড়ির শেষ ঠিকানাটুকু হারিয়ে ফেলেছেন নুরজাহান। স্বামীর বাড়ি অন্য ওয়ারিশেরা ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে সহ তাড়িয়ে দেয় নুরজাহানকে।

যদি কেউ দয়া করে আশ্রয় দেয় সেখানেই হয় মাথা গোঁজার ঠাঁই। নদীর জলে কচুরিপানার মত ভাসতে ভাসতে শেষ ঠাই পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডে নুরজাহানের জন্মস্থানে। প্রতিবন্ধী দুই ছেলেকে সাথে নিয়ে ভিক্ষে করে চলে সংসার। ৪৫ বছর বয়সে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে গ্রামে গ্রামে পায়ে হেঁটে ভিক্ষা করার শক্তিও হারিয়ে ফেলেছেন নুরজাহান।

নুরজাহান বেগম জানান, স্বামীর মৃত্যুর পরে আজ ১৫ বছর বাবার বাড়িতে অন্যের ঝুপড়ি ঘরে পরিত্যক্ত ভিটায় আশ্রয় পেয়েছি। আমার মানসিক,শারিরিক প্রতিবন্ধী দুই সন্তান নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছি আমি গরীব-অসহায় ওদের বাবা নেই। দুই প্রতিবন্ধী সন্তানের দুই হাতের কুনই ও দুই পায়ের আঁকা-বাঁকাসহ চিকন হওয়ায় পঙ্গুত্ব জীবন বরণ করছে। ফলে আমার সন্তানেরা কোন প্রকার কাজ করতে পারছে না।

২৫ ফেব্রুয়ারি জনকণ্ঠ সংবাদ মাধ্যম নুরজাহান বেগমের ঝুপড়ির ঘরে গিয়ে খোজ খবর নিয়ে দেখেন, চোখের সামনে দুই সন্তানের এই করুণ পরিনিতি দেখে অসহায় মা প্রায় সময় বাগরুদ্ধ হয়ে পড়েন।

অভাবের কারণে দুই সন্তানের মুখে ভাল কিছু খাবার তুলে দিতে না পাড়ার কষ্টটাও নাড়া দেয় পরিবারটিকেও। ফলে গরীব বিধবা এই মা দুই সন্তানের জন্য চরম দুচিন্তায় পাড় করছেন বছরের পর বছর। যেন দেখার কেউ নেই।

বিধবা নুরজাহান বেগমের পরিবারের জন্যে একটা গৃহের খুবই প্রয়োজন। স্থায়ী একটি আবাসনের ব্যবস্থা হলে শেষ সময়টা অন্তত একটু শান্তি পেতো। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে বিধবা নুরজাহানের হবে একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই এমনটাই দাবী এলাকাবাসীর।

বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সজল চন্দ্রশীল জানান, বিধবা নুরজাহান বেগমের বিষয়টা আমাদের জানা ছিল না। নুরজাহান বেগমের খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

The post প্রতিবন্ধী দুই সন্তান নিয়ে বিধবা মায়ের সংসার চলে ভিক্ষায়, নেই মাথা গোজার ঠাই! first appeared on Barishal Times | বরিশালটাইমস.



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Pages