বিশ্বে আলোচিত শব্দ কোনগুলো?
আহমেদ শরীফভাষায় নতুন শব্দ সংযোজন চলমান প্রক্রিয়া। ইংরেজি ভাষার ক্ষেত্রে এটি আরো বেশি লক্ষ্য করা যায়। প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে এমন কিছু নতুন শব্দ জনপ্রিয় হয়, যা লেক্সিকোগ্রাফার বা অভিধান প্রণেতা ও ভাষা বিশারদদের বাধ্য করে অভিধানে সংযোজন করতে। গত দশকে বেশ কিছু নতুন ও পুরনো শব্দ প্রযুক্তি, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ঝড় তুলেছে। বিশ্বখ্যাত অক্সফোর্ড, কলিন্স, ডিকশনারি ডটকম, মারিয়াম-ওয়েবস্টার-এর মতো অভিধান প্রকাশক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি বছর বিশেষ কিছু শব্দ ‘ওয়ার্ড অফ দি ইয়ার’ মনোনীত করে। ২০১০ থেকে ২০১৯ সালে বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক বা সামাজিক পরিমণ্ডলে ব্যাপক আলোচনা জন্ম দিয়েছে এমন কিছু শব্দ সম্পর্কে চলুন জেনে নেই।
২০১৯ সালের প্রভাব বিস্তারকারী শব্দগুলো হলো:
# অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি ‘ক্লাইমেট ইমার্জেন্সি’ শব্দটিকে বছরের সেরা শব্দ মনোনীত করেছে। এই শব্দের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া বুঝায়।
# কলিন্স ডিকশনারি মনোনীত করেছে ‘ক্লাইমেট স্ট্রাইক’ শব্দটিকে। জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানোর প্রতিবাদে আন্দোলনে অংশ নেয়াকে ‘ক্লাইমেট স্ট্রাইক’ বলে।
# ডিকশনারি ডটকম ‘এক্সিসটেনশিয়াল’ শব্দটিকে বছরের সেরা শব্দ মনোনীত করেছে। এর অর্থ নিজের অস্তিত্বের জানান দেয়া।
# মারিয়াম-ওয়েবস্টার ডিকশনারি বেছে নিয়েছে ‘দে’ শব্দটিকে। কোনো মানুষের জেন্ডার আইডেনটিটি একাধিক বুঝাতে ‘দে’ বা ‘তারা’ শব্দটি বেছে নেয়া হয়েছে।
২০১৮ সালের প্রভাব বিস্তারকারী শব্দগুলো হলো:
# অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি ‘টক্সিক’ শব্দটিকে বছরের সেরা শব্দ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। আধুনিক বিশ্বে মানুষ যন্ত্রের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত বিষযুক্ত হচ্ছে বলে এই শব্দের স্বীকৃতি দেয়া হয়।
# কলিন্স ডিকশনারির মতে সেরা শব্দ ‘সিঙ্গেল ইউজ’। কোনো উপকরণ কেবল একবার ব্যবহার করাকে সিঙ্গেল ইউজ বলে।
# ডিকশনারি ডটকম ‘মিসইনফরমেশন’কে সেরা শব্দ হিসেবে বেছে নেয়।
# মারিয়াম-ওয়েবস্টার ডিকশনারির মতে সেরা শব্দ ছিল ‘জাস্টিস’।
২০১৭ সালের প্রভাব বিস্তারকারী শব্দগুলো হলো:
# অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি বছরের সেরা শব্দ হিসেবে বেছে নেয় ‘ইউথ কোয়েক’ শব্দটিকে। তরুণদের উদ্যোগে কোনো দেশে সামাজিক, রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক পরিবর্তনকে ‘ইউথ কোয়েক’ বলা হয়।
# কলিন্স ডিকশনারি স্বীকৃতি দেয় ‘ফেইক নিউজ’ শব্দটিকে। গণমাধ্যমে ভুল তথ্যসহ যে নিউজ প্রচার হয়, তা ফেইক নিউজ হিসেবে বিবেচিত।
# ডিকশনারি ডটকম-এর মতে সেরা শব্দ ছিল ‘কমপ্লিসিট’। এর অর্থ কারো সাথে বেআইনি বা অনৈতিক সম্পর্কে জড়ানো ।
# ‘ফেমিনিজম’ শব্দটিকে স্বীকৃতি দেয় মারিয়াম- ওয়েবস্টার ডিকশনারি।
২০১৬ সালের প্রভাব বিস্তারকারী শব্দগুলো হলো:
# অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারির মতে বছরের সেরা শব্দ ছিল ‘পোস্ট ট্রুথ’। রাজনৈতিক কোনো বিষয়ে সত্যকে অগ্রাহ্য করে আবেগ ও ব্যক্তিগত বিশ্বাসকে প্রাধান্য দিয়ে জনমত গড়াকে পোস্ট ট্রুথ বলে।
# কলিন্স ডিকশনারির মতে সেরা শব্দ ‘ব্রেক্সিট’। বৃটেন ও এক্সিট এই দুটি শব্দের আদ্যাক্ষর নিয়ে ব্রেক্সিট। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বৃটেনের বের হয়ে যাওয়ায় যে বিতর্ক, তাই ব্রেক্সিট।
# ডিকশনারি ডটকম বেছে নেয় ‘জেনোফোবিয়া’ শব্দটিকে। এর অর্থ ভিনদেশী মানুষকে দেখে ভয় বা ঘৃণার অনুভূতি হওয়া।
# মারিয়াম-ওয়েবস্টার ডিকশনারির মতে সেরা শব্দ ছিল ‘সাররিয়েল’।
২০১৫ সালের প্রভাব বিস্তারকারী শব্দগুলো হলো:
# প্রথমবারের মতো অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি বছরের সেরা শব্দ হিসেবে বেছে নেয় একটি পিক্টোগ্রাফকে। ‘ফেইস উইথ টিয়ারস অফ জয়’ নামের ইমোজিকে বেছে নেয়ার কারণ ছিল সেবছর এটি সোশাল মিডিয়াতে প্রচুর ব্যবহার হয়েছে।
# কলিন্স ডিকশনারি ‘বিঞ্জ ওয়াচ’ শব্দটিকে বছরের সেরা শব্দ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। সেবছর একাধারে কয়েকটি টিভি এপিসোড একসাথে দেখার প্রবণতা দেখা যায় মানুষের মধ্যে। ‘বিঞ্জ ওয়াচ’ শব্দটির উৎপত্তি সেখান থেকেই।
# ডিকশনারি ডটকম-এর সেরা শব্দ ছিল ‘আইডেনটিটি’।
# মারিয়াম-ওয়েবস্টার ডিকশনারির মতে ‘ইজম’ ছিল বছরের সেরা শব্দ।
২০১৪ সালের প্রভাব বিস্তারকারী শব্দগুলো হলো:
# অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি সেরা শব্দ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ‘ভেপ’-কে। ইলেকট্রনিক সিগারেট ভেপ হিসেবে জনপ্রিয় হয় সেবছর।
# কলিন্স ডিকশনারির মতে সেরা শব্দ ছিল ‘ফটো বম্ব’।
# ডিকশনারি ডটকম বেছে নেয় ‘এক্সপোজার’ শব্দটিকে।
# মারিয়াম-ওয়েবস্টার বছরের সেরা শব্দ হিসেবে ‘কালচার’-কে স্বীকৃতি দেয়।
২০১৩ সালের প্রভাব বিস্তারকারী শব্দগুলো হলো:
# অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারির মতে বছরের সেরা শব্দ ছিল ‘সেলফি’।
# কলিন্স ডিকশনারির মতে ‘গিক’ ছিল সেরা শব্দ। আগে অবজ্ঞা করতে বোকা টাইপের, অসামাজিক মানুষকে এই শব্দে ডাকা হতো। তবে নতুন অর্থে কোনো বিষয়ে একজন খুব দক্ষ বোঝাতে ‘গিক’ ব্যবহার শুরু হয়।
# ডিকশনারি ডটকম ‘প্রাইভেসি’ শব্দটিকে বেছে নেয়।
# মারিয়াম-ওয়েবস্টার এর মতে সেরা শব্দ ছিল ‘সায়েন্স’।
২০১২ সালের প্রভাব বিস্তারকারী শব্দগুলো হলো:
# অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি দুটি শব্দকে বেছে নেয়। বৃটেনের জন্য ‘ওমনিশ্যাম্বলস’, যার অর্থ হলো- বেশ কিছু ভুলের কারণে কোনো কিছুতে পুরোপুরি অব্যবস্থাপনা থাকা। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বেছে নেয় ‘জিআইএফ’ (গ্রাফিক ইন্টারচেঞ্জ ফরম্যাট বা ইমেইজসহ এক ধরনের কম্পিউটার ফাইল) । সোশাল মিডিয়াতে এর ব্যবহার বেড়ে যায় সেবছর।
# ডিকশনারি ডটকম ‘ব্লাস্টার’-কে বছরের সেরা শব্দ মনোনীত করে। শব্দটির মানে হলো উচ্চ স্বরে দাম্ভিকতা নিয়ে কথা বলা। তবে যার প্রভাব খুব কম হয়।
# মারিয়াম-ওয়েবস্টার এর মতে সেরা শব্দ ছিল ‘সোশালিজম’।
২০১১ সালের প্রভাব বিস্তারকারী শব্দগুলো হলো:
# অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি ‘স্কুইজড মিডল’ শব্দকে সেরা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। শব্দটির মানে- সমাজের সেসব মানুষ যাদের আয় খুব কম, তবে এরপরও যাদের কর দিতে হয়।
# ডিকশনারি ডটকম ‘টারজিভার্সেট’ শব্দটিকে সেরা শব্দ মনোনীত করে। এর মানে হলো বিশেষ কারণে সম্মানের সাথে একজনের আচরণ বা মত বারবার পরিবর্তন করা।
# মারিয়াম-ওয়েবস্টারের মতে ‘প্রেগমাটিক’ সেরা শব্দ ছিল।
২০১০ সালের প্রভাব বিস্তারকারী শব্দগুলো হলো:
# অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি দুটি শব্দকে বেছে নেয়। বৃটেনের জন্য ‘বিগ সোসাইটি’। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘রিফিউডিয়েট’। আমেরিকান রাজনীতিবিদ সারাহ পালিন ‘রিফিউডিয়েট’ শব্দটি ব্যবহার করেন। রিফিউজ আর রিপুডিয়েট (কোনো ব্যক্তি বা কোনো কিছুর সাথে সম্পর্ক না রাখা) শব্দের মিশ্রণে নতুন এই শব্দের সৃষ্টি করেন পালিন।
# ডিকশনারি ডটকম ‘চেইঞ্জ’ শব্দটিকে বেছে নেয়।
# মারিয়াম-ওয়েবস্টার স্বীকৃতি দেয় ‘অস্টারিটি’ শব্দটিকে। বিশ্বের বেশ কিছু দেশ সেসময় ব্যয় কমানোর জন্য কিছু পদক্ষেপ নেয়ায় যে কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, তা স্মরণ করতেই এই শব্দ বেছে নেয়া হয়।
তথ্যসূত্র: টাইমস অফ ইন্ডিয়া
ঢাকা/তারা
from Risingbd Bangla News https://ift.tt/2s4ohx4
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন