মণ্ডল-খানের ৩৫ বছরের দ্বন্দ্ব, সমাধান অজানা
মাহমুদুল হাসান মিলনএকদিকে মণ্ডল গোষ্ঠী, অপরদিকে খান গোষ্ঠী। দুই গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব দীর্ঘ ৩৫ বছরের। সিনেমার কাহিনীর মতো ময়মনসিংহের সদর উপজেলার দিয়ারচর গ্রামে এই দ্বন্দ্ব বহুবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রুপ নিয়েছে। ঘটেছে প্রাণহানি।
সম্প্রতি দুই গোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীর প্রেমের সম্পর্ক, পরে সেই তরুণীকে ধর্ষণের জেরে দ্বন্দ্ব আবার চরমে উঠেছে। ঘটছে সহিংস ঘটনা। পুলিশ প্রশাসন চেষ্টা করছে, জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় স্থায়ীভাবে এই দ্বন্দ্ব অবসানের।
সরেজমিন সেখানে গেলে মণ্ডল গোষ্ঠীর কামাল হোসেন মণ্ডল বলেন, ১৯৮৫ সাল থেকে খান গোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের বিরোধ চলছে। এই বিরোধে ১৯৮৫ সালে তার চাচা মেঘু মিয়া; ১৯৯৯ সালে বাবা আব্দুল মোতালেবকে প্রাণ দিতে হয়েছে।
তিনি বলেন, খান গোষ্ঠী শক্তিশালী। তাই প্রকাশ্যে দুটি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েও আইনের ফাঁক-ফোকড় দিয়ে তারা বেরিয়ে এসেছে। ২০০৪ সালে হত্যার উদ্দেশ্যে তার উপর হামলা করা হয়। তথন একটি চোখ নষ্ট হলেও তিনি প্রাণে বেঁচে যান।
তিনি বলেন, ‘‘গত ১৭ আগস্ট মণ্ডল গোষ্ঠীর অষ্টম শ্রেণী পড়ুয়া এক কিশোরীকে প্রেমের প্রলোভন দেখিয়ে খান বাড়ির ছেলে ‘মমিন খান’ রাতের আঁধারে ধর্ষণ করে অজ্ঞান অবস্থায় মাঠে ফেলে রেখে যায়। এ নিয়ে থানায় মামলা হয়। এরপর থেকে খান গোষ্ঠীর স্থানীয় ইউপি সদস্য এনামুল হক খান মামলা তুলে নিতে নানাভাবে হুমকি দেন।’’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘‘মামলা তুলে না নেওয়ায় তারা আমাদের ১০-১২টি ঘরে দিনে-দুপুরে হামলা চালিয়ে লুটপাট করে। কয়েক একর জমির ফসল নষ্ট করে। ২২ জনকে পিটিয়ে আহত করে।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমরা তাদের ভয়ে বাড়ি ছাড়া। উল্টো তারা আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।’’
তাদের এলাকা ময়মনসিংহ সদর, ফুলপুর এবং নকলা উপজেলার সীমান্ত হওয়ায় তারা সহজে পুলিশি সহায়তা পান না বলে অভিযোগ করেন তিনি। তিনি এ সব ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চান।
স্থানীয় ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, মণ্ডল গোষ্ঠী এবং খান গোষ্ঠীর বিরোধ দীর্ঘদিনের। সালিশে বসে বিরোধ নিরসনের বহু চেষ্টা করা হয়েছে, তাতে লাভ হয়নি। সম্প্রতি খান বাড়ির ছেলের সঙ্গে মণ্ডল বাড়ির মেয়ের প্রেম ও ধর্ষণের জেরে হামলা, লুটপাট হয়।
‘‘আমি মীমাংসা করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আমার বাড়িতেও হামলা হয়েছে।’’
স্থানীয় ইউপি সদস্য ও খান গোষ্ঠীর এনামূল হক খান বলেন, ‘‘মণ্ডল গোষ্ঠীর লোক নানাভাবে আমাদের হেয় প্রতিপন্ন করেছে। তাদের সঙ্গে সমঝোতা হবে না।’’
বোররচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত আলী বুদু বলেন, একটি মেয়েকে কেন্দ্র করে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব আবার মাথা চাড়া দিয়েছে। এ নিয়ে চার গোষ্ঠী এখন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। মণ্ডল-হাজী এবং খান-সরকার গোষ্ঠীর লোকজন বিবাদে জড়িয়ে পড়েছে।
স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বহুবার সংঘর্ষ হয়েছে। এলাকাবাসীও তাদের সংঘর্ষের আশঙ্কায় আতঙ্কে থাকে। তারা এর স্থায়ী সমাধান চায়।
কোতয়ালী মডেল থানার ওসি মাহমুদুল ইসলাম বলেন, দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বংশ পরম্পরায় বিরোধ চলে আসছে; সেটি আইনি প্রক্রিয়ায় সমাধান সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, পুলিশ প্রশাসন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সহায়তায় স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা করছে। তিনি আশা করেন, অচিরেই সমাধানের একটি পথ খুঁজে পাবেন।
ঢাকা/বকুল
from Risingbd Bangla News https://ift.tt/35v7UqJ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন