পিনাকী চক্রবর্তী ■ আলিপুরদুয়ারসাতসকালে দরজায় খট খট। কড়া নাড়ার শব্দ শুনে খানিকটা বিরক্তির উদ্রেকই হয়েছিল। সবে সকাল সাতটা তখন। কালো মেঘে ছেয়ে রয়েছে আকাশ। বৃষ্টি নামবে নামবে করছে। ঘুম ভাঙলেও, যায়নি ঘুমের আমেজ। কলকাতা থেকে ডুয়ার্সে ঘুরতে আসা কুশারী পরিবার লজের কেউ কড়া নাড়ছে বলে ভেবেছিলেন। হঠাৎই দরজা ভেঙে ফেলে আগন্তুক। তার পর ক্রমাগত শুঁড় দিয়ে নাগাল পাওয়ার চেষ্টা করতে থাকে ঘরের ভেতর থাকা মানুষগুলির। স্বয়ং মৃত্যুদূত যেন। ততক্ষণে ঘরের এককোণে সরে গিয়ে নাগাড়ে ইষ্টনাম জপ করতে শুরু করেছেন কুশারী পরিবারের সদস্যরা। মিনিট দশেকের রুদ্ধশ্বাস লড়াই। অবশেষে আশপাশের লোকজনের চিৎকারে ছানাদের নিয়ে জঙ্গলে পালায় মা হাতি।মঙ্গলবার সকাল ৭ টা নাগাদ তিন শাবককে সঙ্গে নিয়ে জলদাপাড়া জঙ্গল থেকে মাদারিহাটের আরণ্যক লজে ঢুকে পড়ে মা হাতি। একেবারে জঙ্গল লাগোয়া ওই লজের সামনেই চওড়া এশিয়ান হাইওয়ে। জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান লাগোয়া বিশ্বজিৎ সাহার ওই লজের একটি রুমে স্ত্রী পিয়ালী ও কন্যা প্রীতিকে নিয়ে উঠেছিলেন কলকাতার সুমন কুশারী। অন্য ঘরে ছিলেন তাঁর বন্ধু সুজিত ভৌমিক ও তাঁর পরিবার।সুমন বলেন, ‘কলকাতা থেকে জলদাপাড়ায় ঘুরতে এসেছি। মঙ্গলবার সকাল ৭ টা নাগাদ, একটি মা হাতি তিনটি শাবক নিয়ে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান থেকে বেড়া ভেঙ্গে লজের ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ে। আমরা কাচের জানলা দিয়ে মা হাতি ও শাবকদের খুনসুটি দেখছিলাম। হঠাৎই মা হাতি চিৎকার করতে করতে আমাদের রুমের সামনে চলে আসে। প্রথমে কড়া নাড়ে। মুহূর্তের মধ্যে দরজা ভেঙে ফেলে ঘরের ভেতর মাথা ঢোকানোর চেষ্টা করে। আমাদের ধরার চেষ্টা করছিল।’ ঘটনার বর্ণনা দিতে দিতে গলা শুকিয়ে আসে তাঁর।সেই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে যেন মৃত্যুকেই প্রত্যক্ষ করছিলে পরিবারের সদস্যরা। সুমন বলেন, ‘সাক্ষাৎ মৃত্যু শিয়রে। ওই অবস্থায় ইষ্ট দেবতার নাম জপ ছাড়া আর কিছুই উপায় ছিল না। প্রায় মিনিট দশেক ওই অবস্থায় কাটে। পরে লজের কর্মীদের চিৎকার বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে ঢুকে যায় মা হাতিটি। হাঁফ ছেড়ে বাঁচি আমরা। সারা জীবন মনে থাকবে এই ঘটনা। এখনও ভাবলেই শরীরের রক্ত হিম হয়ে আসছে। জলদাপাড়া ঘুরতে এসে এমন ঘটনার সাক্ষী থাকতে হবে ভাবতেই পারছি না।’সুমনের বন্ধু সুজিত বলেন, ‘খানিক আগেই আমি রাস্তায় মর্নিং ওয়াকে বেরিয়েছিলাম। কিন্তু আকাশের অবস্থা খারাপ থাকায় ফিরে আসি। কিন্তু ফিরেও যে এমন বিপদ অপেক্ষা করে ছিল, তা কে জানতো? মৃত্যু ভয়ের সঙ্গে ওই ভয়ঙ্কর সৌন্দর্যকে চাক্ষুষ করে খানিকের জন্য বিহ্বল হয়ে পড়েছিলাম। জীবনেও ভোলার নয় সে অভিজ্ঞতা।’লজ মালিক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘বড় বিপদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন ওই পর্যটক পরিবারগুলি। সঙ্গে শাবক থাকার জন্যই মা হাতি ওই আচরণ করেছে। তবে আমাদের কর্মীরা তৎপর থাকায় মারাত্মক বিপদ এড়ানো সম্ভব হয়েছে। হাতির হানায় লজের বেশ খানিকটাই ক্ষতি হয়েছে।’অন্য দিকে, মাদারিহাট সুভাষ নগরের সুজিত সাউয়ের বাড়িতে সোমবার মধ্যরাতে হানা দেয় কয়েকটি হাতি। সুজিতের উঠোনে থাকা বিপ্লব দাসের টোটো ভেঙে ফেলে হানা দেয় পাশের বিল্টু সাহার বাড়িতে। বিল্টু জানান, তাঁর প্রায় তিন ফুট উঁচু বারান্দায় উঠে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে দু’টি হাতি। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর প্রতিবেশীদের চিৎকারে চলে যায় হাতিগুলো। হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন তাঁরা।জলদাপাড়া নর্থ রেঞ্জের রেঞ্জার শ্রীবাস সরকার বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্তরা আবেদন করলে সরকারি নিয়মে ক্ষতিপূরণ পাবেন।’
from Eisamay http://bit.ly/2WBeIUc
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
Author Details
I am an Executive Engineer at University of Barishal. I am also a professional web developer and Technical Support Engineer.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন