অশীন বিশ্বাস ও অভিজ্ঞান নস্করদাবিদাওয়া মেটানোর আশ্বাসে ডাক্তারদের কর্মবিরতি উঠল। কিন্তু কয়েকদিন আগে উঠলে অকালে কিছু প্রাণ ঝরে পড়ত না।মধ্যমগ্রামের গঙ্গানগর কাটাখালের বাসিন্দা অভিজিৎ মল্লিকের তিন দিনের শিশুপুত্র সাগর দত্ত হাসপাতালে মারা যায় কর্মবিরতির সময়। কারণ শিশুটির জন্মের পর থেকে শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু ওই হাসপাতালে পেডিয়াট্রিক ভেন্টিলেটর না-থাকার কারণে এবং জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতির জেরে অন্যত্র ভর্তি করতে না পেরে কার্যত বিনা চিকিৎসায় তাঁর মৃত্যু হয়। আজ কর্মবিরতি ওঠার পর পুত্রহারার মন্তব্য, ‘প্রশাসনের উচিত ছিল আরও দ্রুত বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়া। শুরুতেই যদি প্রশাসন নমনীয় হত তা হলে আমার তিন দিনের বাচ্চাকে মরতে হত না। চিকিৎসকদের মারধর করাটা ঠিক নয়। তাঁদের সঙ্গে যেটা হয়েছে সেটা অন্যায়।’অভিজিতের আফসোস, ‘জুনিয়র চিকিৎসকদের সমস্যা হয়তো মিটল, কিন্তু আমার বাচ্চাটি আর ফিরে আসবে না। প্রশাসন ৭ দিন সময় না-নিয়ে যদি দু’দিনেই সমস্যা মিটিয়ে ফেলত তা হলে চিকিৎসকদের নির্দেশে আমাকে স্ত্রীর সামনে অভিনয় করতে হত না। কারণ স্ত্রী ঝুম্পা কর্মকার মল্লিক এখনও জানেন তাঁর বাচ্চা বেঁচে রয়েছে এবং ফুলবাগান শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।’তাঁর ক্ষোভ, ‘ছেলে জন্মানোর পর থেকে হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলেছেন তাঁরা তাদের সাধ্যমতো ডিউটি পালন করেছেন। আবার সেই চিকিৎসকদেরই লেখা কাগজ নিয়ে যখন কলকাতার এক হাসপাতাল থেকে আর এক হাসপাতাল ঘুরেছি তখন পুলিশ সেই সব হাসপাতালে ঢুকতে দেয়নি। পুলিশ বলেছে, তাঁরা তাদের ডিউটি পালন করেছে। সবাই যদি সবার ডিউটি পালন করে থাকে তা হলে ছেলের মৃত্যু হল কীভাবে!’কাকেই তিনি দায়ী করবেন সেটাই তিনি বুঝতে পারছেন না। এখন তাঁর বক্তব্য, ‘আমার বাচ্চাকে পূর্ব পরিকল্পনামাফিক খুন করা হয়েছে।’বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন ক্যানিংয়ের ঘুটিয়ারি শরিফ এলাকার গৃহবধূ শিখা গোমস্তা (৪১)। পরিবারের লোকজন সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন ঘুটিয়ারি শরিফ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। অবস্থা খারাপ হতে থাকায় দেরি না-করেই তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা কোনও ঝুঁকি না-নিয়ে তাঁকে স্থানান্তরিত করে দেয় কলকাতা চিত্তরঞ্জন হাসপাতালে। অ্যাম্বুল্যান্সে রোগী নিয়ে শহরে গিয়েও একের পর এক হাসপাতালে দৌড়ঝাঁপ করে কোথাও ভর্তি করতে পারা যায়নি শিখাকে। ফিরিয়ে আনা হয় ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে। সেখানেই কয়েক ঘন্টা চিকিৎসার পরই বুধবার সকালে মৃত্যু হয় শিখার।মৃতার স্বামী সুরেশ গোমস্তা, বিবাহিত মেয়ে সঞ্চিতা ও দ্বাদশ শ্রেণিতে পাঠরত ছেলে শুভঙ্করের বক্তব্য, শুধুমাত্র চিকিৎসার সুযোগ না-মেলাতেই অকালে প্রাণ দিতে হয়েছে তাঁদের প্রিয়জনকে।শুভঙ্কর বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় অবশেষে উঠল জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলন। যদি এই আলোচনা আগে করা যেত তা হলে আমার মাকে চিকিৎসার অভাবে এ ভাবে মরতে হত না।’
from Eisamay http://bit.ly/31HCTiC
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
Author Details
I am an Executive Engineer at University of Barishal. I am also a professional web developer and Technical Support Engineer.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন