বরিশালের টাইমস, জাতীয়, রাজনীতি, অর্থনীতি, সারা বাংলা, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, চাকরি, বিনোদন, সাতসতেরো, ক্যাম্পাস, অন্যান্য

Breaking

সোমবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৯

সীমা ছাড়িয়েছেন নায়েক, মত পূর্বসূরি আমানুল্লার

অমল সরকারবাংলা ও বিহারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির তুলনা টেনে রাজ্যের বিশেষ পর্যবেক্ষক অজয় কে নায়েক যে মন্তব্য করেছেন তা সমর্থন করেন না ওই পদে তাঁর পূর্বসূরি আফজল আমানুল্লা। রবিবার তিনি ‘এই সময়’-কে তিনি দিল্লি থেকে ফোনে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষকেরা এই ধরনের মন্তব্য করতে পারেন না। এটা আচরণবিধির পরিপন্থী। নির্বাচন কমিশন চায় না কোনও পর্যবেক্ষক রাজনৈতির বিতর্কে জড়িয়ে পড়ুন। তাদের কোনও মন্তব্য কোনও দলের পক্ষে বা কোনও দলের বিপক্ষে যায়। তাঁরা কোনও রাজনৈতিক অবস্থান নিতে পারেন না।তাঁর আরও বক্তব্য, পর্যবেক্ষকদের প্রাথমিক কাজ হল যা দেখবেন, শুনবেন তা কমিশনকে রিপোর্ট করা। অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট করার জন্য যা যা পদক্ষেপ করার দরকার কমিশনকে সেই ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়াও পর্যবেক্ষকের কাজ। কিন্তু তিনি এমন কিছু বলবেন না বা করবেন না যা থেকে তাঁর এবং কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।’ আমানুল্লা বলেন, ‘এই সব ক্ষেত্রে কমিশন সাধারণত ডেপুটি নির্বাচন কমিশনারকে দিয়ে সংশ্লিষ্ট পর্যবেক্ষককে সতর্ক করে থাকে। আমার ধারণা কমিশন নায়েককে ইতিমধ্য সতর্ক করেছে।’নায়েকের প্রসঙ্গেই আমানুল্লা জানান, ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় তিনি বাংলায় ভোট স্থগিত করে দেওয়ার সুপারিশ করে কমিশনকে রিপোর্ট পাঠিয়েছিলেন। কারণ, পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে মনে হয়েছিল, রাজ্যে অবাধ ভোটের পরিস্থিতি নেই। শেষে তৎকালীন শাসকদল সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়ায় কমিশন ভোট স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত বাতিল করেছিল। আমানুল্লা বলেন, ‘এত বড় সুপারিশের কথা আমি তখন প্রকাশ্যে মিডিয়াকে বলিনি। শুনেছি, আমার দেওয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তীকালেও কমিশন একাধিক পদক্ষেপ করেছে বাংলায়।’দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজ, দিল্লি স্কুল অব ইকনমিক্স এবং হার্ভার্ডের প্রাক্তনী আমানুল্লা ৩৩ বছরের কর্মজীবনে কেন্দ্র এবং বিহার সরকারের একাধিক দপ্তরের সচিব পদে ছিলেন। বর্তমানে বিহার রিয়াল এস্টেট রেগুলেটরি অথরিটির চেয়ারম্যান তিনি। বিহার ক্যাডারের আইএএস তথা ওইরাজ্যের প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচনী অফিসার নায়েকের মন্তব্য সম্পর্কে আমানুল্লার পর্যবেক্ষণ, ‘যে মন্তব্য করা হয়েছে তা একটি সরকারের বিপক্ষে, আর একটি সরকারের পক্ষে।’ নায়েক শনিবার মন্তব্য করেছিলেন, ‘বাংলার অবস্থা দশ বছর আগের বিহারের মতো।’ আমানুল্লা বলেন, ‘দশ বছর আগে বিহারে অন্য সরকার ছিল। দশ বছর আগের সঙ্গে তুলনা টানার অর্থ বর্তমান সরকারকে কৃতিত্ব দেওয়া। একজন পর্যবেক্ষকের এভাবে বলা ঠিক না।’এ দিন বিশেষ পর্যবেক্ষক হিসেবে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে আমানুল্লা বর্তমান বিশেষ পর্যবেক্ষক নায়েকের প্রসঙ্গ টেনে এনে বলেন, ‘আজ সকালে দিল্লিতে কাগজে একটা খবর পড়ে অবাক হয়ে গেলাম। দেখলাম, আমাদের একজন অফিসার যিনি কিনা বিশেষ পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব নিয়ে বাংলায় গিয়েছেন, তিনি মিডিয়াকে বলেছেন, বাংলার অবস্থা দশ বছর আগের বিহারের মতো। ওঁর এই মন্তব্য পড়ে আমি অত্যন্ত মর্মাহত ও বিস্মিত। পর্যবেক্ষকের এমন মন্তব্য করা উচিত নয়।’ আমানুল্লা আরও বলেন, ‘উনি যদি মনে করেন অবাধ ভোটের পরিস্থিতি নেই, তা হলে সে কথা কমিশনকে জানিয়ে তিনি প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে পারেন। যেমন আমি দিয়েছিলাম।’কিন্তু, কমিশন তো তাঁর পরামর্শ মতো সে বার ভোট স্থগিত করেনি। আমানুল্লার জবাব, ‘তখনকার শাসকদলের একজন নেতা (সিপিএম নেতা বিমান বসু) কর্মী-সমর্থকদের বলেছিলেন, পর্যবেক্ষকদের ঘাড়ধাক্কা দিতে। সংবাদপত্রে এই খবর পড়ে আমি আঁতকে উঠি। ওই মন্তব্য অত্যন্ত অবমাননাকর মনে হয়েছিল। এ ভাবে হুমকি দেওয়া হলে কীভাবে অবাধ ভোট সম্ভব? আমি সেই কারণে কমিশনকে বলি, বাংলায় ভোট স্থগিত রাখতে। দেশের বাকি অংশের ভোট হওয়ার পর বাংলায় ভোট করাতে। পরে আমাকে জানানো হয়, শাসকদলের শীর্ষ নেতৃত্ব দিল্লিতে কমিশনকে আশ্বস্ত করেছেন তাঁদের লোকেরা কোনও অশান্তি করবে না। এই আশ্বাস পাওয়ার পর কমিশন আর ভোট স্থগিত করার পথে হাঁটেনি।’আমানুল্লার এই বক্তব্যের সমর্থন মেলে তৎকালীন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার টিএস কৃষ্ণমূর্তির ‘মিরাকল অফ ডেমোক্র্যাসি’ বইয়ে। সেখানে বাংলার অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে কৃষ্ণমূর্তি লিখেছেন, ‘পর্যবেক্ষকদের হুমকি দেওয়ার পর আমি রাজ্যের মুখ্যসচিবকে ফোন করি। আমাকে কিছু সময় পর মুখ্যমন্ত্রী (বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য) ফোন করেন। তিনি বলেন, তাঁদের পার্টির নেতারা কমিশনের সঙ্গে দেখা করতে চান। তাঁরা দেখা করে আশ্বাস দেন।’২০০৪ এ লোকসভা ভোটের সময় রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার ছিলেন বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়। টিএস কৃষ্ণমূর্তি (রাজস্ব বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত আমলা) বাসুদেবকে আগাম জানিয়ে বিহারের পদস্থ আমলা আফজল আমানুল্লাকে বিশেষ পর্যবেক্ষক করে পাঠান। তিনিই ছিলেন সেই ভোটে দেশে একমাত্র বিশেষ পর্যবেক্ষক। কলকাতায় পৌঁছে রাইটার্স বিল্ডিংয়ে বাসুদেববাবু এবং তৎকালীন মুখ্যসচিব অশোক গুপ্তর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর আমানুল্লা মন্তব্য করেছিলেন, ‘বাংলার অবস্থা বিহারের থেকেও খারাপ।’ এ দিন তাঁর সেই মন্তব্য সম্পর্কে আমানুল্লা বলেন, ‘কথাটা আমি অন্য ভাবে বলেছিলাম। আমার বক্তব্য ছিল, মানুষ এমনটা মনে করে। কিন্তু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট করানোই যে আমাদের লক্ষ্য সে কথাও বলেছিলাম।’আমানুল্লা বলেন, ‘বাংলায় পৌঁছে আমি বুঝতে পারি প্রশাসনের একাংশের মধ্যে একটি রাজনৈতিক দলের প্রতি আনুগত্য রয়েছে। আমার সুপারিশে কয়েকজন অফিসারকে (তিন জেলার পুলিশ সুপার) সরানো হয়েছিল। আমি ব্যক্তিগতভাবে কয়েকজন জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে বৈঠকে তাঁদের বলি, একজন আদর্শ সিভিল সার্ভেন্টের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত। বেশ কিছু ভালো অফিসারের সঙ্গেও আমার সাক্ষাৎ হয়েছিল।’

from Eisamay http://bit.ly/2ZsrtOH

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Pages