বরিশালের টাইমস, জাতীয়, রাজনীতি, অর্থনীতি, সারা বাংলা, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, চাকরি, বিনোদন, সাতসতেরো, ক্যাম্পাস, অন্যান্য

Breaking

শুক্রবার, ৮ জুলাই, ২০২২

এখনও ক্ষত চিহ্ন বয়ে বেড়ান স্বজনহারা মানুষেরা

এখনও ক্ষত চিহ্ন বয়ে বেড়ান স্বজনহারা মানুষেরা

হাসান পিন্টু, লালমোহন:: শুক্রবার (৮ জুলাই)। ভোলার ইতিহাসে ভয়াবহ দিন এটি। ২০০৩ সালের এই দিনে ঢাকা থেকে লালমোহনগামী এমভি নাসরিন-১ চাঁদপুরের ডাকাতিয়া এলাকায় প্রায় ২ হাজার যাত্রী নিয়ে মেঘনা নদীতে ডুবে যায়। এতে প্রাণ হারায় জেলার তিন উপজেলার অন্তত ৪ শতাধিক মানুষ। তার মধ্যে লালমোহনেরই ২ শতাধিক যাত্রী প্রাণ হারান। ওই দুর্ঘটনার পর থেকে এক এক করে পেরিয়ে গেছে ১৯ বছর। সেই দুর্ঘটনায় কেউ হারিয়েছে বাবা-কেউবা পরিবারের একমাত্র উপর্জনক্ষম ব্যক্তিকে। মর্মান্তিক সেই স্বজনহারা মানুষদের কান্না আজও থামেনি।

সেই দুর্বিশহ স্মৃতির কথা মনে করে আজও আঁতকে উঠেন স্বজনহারা মানুষেরা। দুর্ঘটনা অনেকেই স্বপরিবারে মারা যান। আবার কেউ পরিবারের এক বা একাধিক স্বজন হারান। বেশীরভাগ মানুষের লাশ খুঁজে পাওয়া যায়নি। নিখোঁজরা ফিরে আসবেন এমন প্রতিক্ষায় এখনও অনেকে। প্রিয়জন হারানোর পর পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকেই ঘুরে দাড়িয়েছেন, তবে স্বজন হারানোর ক্ষত আজও কাদায় তাদের।

লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়নের গজারিয়া বাজার সংলগ্ন বেপীর বাড়ির বশির উদ্দিন বেপারি পেশায় বাস চালক ছিলেন। চাকরির খোঁজে তিনি ঢাকায় গিয়েছিলেন। দুর্ঘটনার কবলিত সেই লঞ্চের যাত্রী ছিলেন। সেদিন তিনিও ফিরছিলেন নিজের বাড়িতে। কিন্তু দুর্ঘটনার পর থেকে সে নিখোঁজ। তার লাশ পাওয়া যায়নি। নিখোঁজ বশিরের পরিবারের সদস্য তাকে খোঁজাখুঁজি করেছেন। কিন্তু তার লাশ খুঁজে পাননি। ছেলে মাহফুজের বয়স তখন ৬ মাস। বাবার আদর- স্নেহ পাননি। এখন তার বয়স ১৯ বছর।
কান্নাজড়িত কন্ঠে মাহফুজ জানায়, কোনদিন বাবার আদর ভালোবাসা পাইনি’। বাবার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে। বাবার অভাব কোনোদিন পূরণ হবার নয়।

বশির বেপরীর মত ইলিশ কান্দির গ্রামের সিরাজ পাটোয়ারী নাসনি-১ লঞ্চ দুর্ঘটনায় নিখোঁজ। তার লাশ পাওয়া যায়নি। তিনি পেশায় কৃষক ছিলেন। পরিবার একমাত্র উপর্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে কষ্টে দিন কাটিয়েছিলেন স্ত্রী পারুল বেগম। ছেলে-মেয়েরা বড় হয়েছে, পড়াশুনা করছে। অভাব-অনাটনের মধ্যে দিন কাটিয়েছেন তিনি। এখন ভালো আছেন। কিন্তু স্বজনহারা ব্যাথা এখনও ভুলতে পারছেন না পারুল বেগম। তিনি বলেন, দুর্ঘটনার পর থেকে কেউ আমাদের খবর নেয়নি। অনেক কষ্টে করে এ ১৯ বছর পার করেছি।
জানা গেছে, অতিরিক্ত যাত্রী ও মালবোঝাইয়ের কারণে পানির প্রবল ঢেউয়ে নাসরিন-১-এর তলা ফেটে গেলে প্রায় ২ হাজারের বেশি যাত্রীসহ লঞ্চটি ডুবে যায়। লঞ্চে থাকা যাত্রীদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশেরই সলিল সমাধি হয়। ধারণা করা হয়, লঞ্চ ডুবিতে কমপক্ষে ৮শ যাত্রী মারা গেছেন।

লালমোহন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ গিয়াসউদ্দিন বলেন, লঞ্চটি ত্রুটিপূর্ণ ছিল। মর্মান্তিক সেই দুর্ঘটনায় অনেক মানুষ মারা গেছে, তাদের মধ্যে লালমোহনের মানুষই অনেক বেশী। লঞ্চ মালিকপক্ষ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত এবং নিহত ও নিখোঁজ পরিবারে সহায়তা করে সেই দাবী জানাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নূরুন্নবী চৌধুরী শাওনের উদ্যোগে লালমোহন-ঢাকা নৌরুটে বিলাসবহুল বেশ কয়েকটি লঞ্চের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন এ রুটের লঞ্চ অনেকটা নিরাপদ। তবুও লঞ্চে যাতায়াতকারী যাত্রীদের সব সময় সর্তক থাকতে হবে।’

 

The post এখনও ক্ষত চিহ্ন বয়ে বেড়ান স্বজনহারা মানুষেরা first appeared on Barishal Times | বরিশালটাইমস.



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Pages