এমপি পাপুলের পরিবারের আয়-ব্যয়ের হিসাবের সন্ধানে দুদক
এম এ রহমান মাসুমলক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাংসদ কাজী সহিদ ইসলাম পাপুল ও তার স্ত্রী সেলিনা ইসলামের নির্বাচনী হলফনামা পেতে নির্বাচন কমিশনে তাগিদপত্র দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
একই সঙ্গে অর্থপাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের স্বার্থে এনবিআরের কাছে পাপুল দম্পতি ও পাপুলের শ্যালিকার আয়করের নথিপত্র চেয়েছে সংস্থাটির অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন। দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আয়কর নথিপত্রের জন্য বুধবার (১৭ জুন) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এনবিআরের কর অঞ্চল-৫ ও কর অঞ্চল-১৩ এর ডেপুটি কমিশনার বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে। এনবিআরে দেওয়া চিঠিতে পাপুল, তার স্ত্রী সেলিনা ও সেলিনার বোন জেসমিনের গত তিন অর্থ বছরের আয়কর রিটার্নসহ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র চাওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, নির্বাচন কমিশন ও দুদক সূত্রে জানা যায়, নির্বাচন কমিশন সচিবের কাছে পাপুল দম্পতির নির্বাচনী হলফনামা চেয়ে তাগিদপত্র দিয়েছে মঙ্গলবারে পাঠানো চিঠিতে। এর আগে গত ১৬ মার্চ নির্বাচন কমিশনে পাপুল ও তার স্ত্রী সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলামের নির্বাচনী ব্যয় নির্বাহের জন্য অর্থ প্রাপ্তির সম্ভাব্য উৎসের বিবরণী (ফরম-২০), সম্পদ ও দায় এবং বাৎসরিক আয় ও ব্যয়ের বিবরণী (ফরম-২১), দাখিলকৃত শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদসহ প্রার্থী কর্তৃক দাখিলকৃত অন্যান্য রেকর্ডপত্র চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছিল।
চিঠিতে বলা হয়, লক্ষীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালক কাজী সহিদ ইসলাম পাপুলের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে গ্রাহককে লোন বরাদ্দ করাসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ মানিল্ডারিং করে বিদেশে পাচার এবং শত শত কোটি টাকা জাত্ আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন সংক্রান্ত একটি অভিযোগ দুদকের অনুসন্ধানধীন রয়েছে। অভিযোগটি অনুসন্ধানের স্বার্থে জরুরিভিত্তিতে চাহিদাকৃত রেকর্ডপত্র সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হলো। তবে নির্বাচন কমিশন থেকে নথিপত্র না পাওয়ায় তাগিদপত্র দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. আলমগীরে সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। অন্যদিকে জনসংযোগ দপ্তর থেকে নথিপত্র পাঠাতে দেরি হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে পারেনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, অনুসন্ধান কর্মকর্তা মূলত নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় ঘোষিত সম্পদের হিসাব ও এনবিআরের প্রদত্ত আয়কর রিটার্নে তথ্য যাচাই-বাছাই করতে নথিপত্র তলব করেছে। কারণ দুদকের প্রাথমিক হিসাবে অবৈধ সম্পদের অনেক তথ্য রয়েছে। তাছাড়া নির্বাচন কমিশন ও এনবিআরে দেওয়া তথ্যের ফারাকও যাচাই করে দেখা হবে।
এ বিষয়ে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা (পরিচালক) প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্যের কাছে জানতে চাইলে রাইজিংবিডিকে বলেন, সংসদ সদস্য পাপুলের বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। এ অবস্থায় অনুসন্ধান কর্মকর্তা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চিঠি দেবেন; যা অনুসন্ধান ও তদন্ত পর্যায়ের রুটিন কাজ। যতটুকু জানি দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
পাপুল, তার স্ত্রী, মেয়ে ও শ্যালিকাকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বুধবার পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) ইমিগ্রেশনে অনুরোধ জানিয়েছে দুদক। এর আগে গত ৯ জুন অনুসন্ধান কর্মকর্তার পাঠানো চিঠিতে পাপুল, তার স্ত্রী, মেয়ে ও শ্যালিকার জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, টিআইএন নম্বর, আয়কর রিটার্নসহ ব্যক্তিগত নথিপত্র তলব করা হয়।
এরই মধ্যে কিছু নথিপত্র দুদকে পৌঁছেছে বলে জানা গেছে। এছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে তথ্য চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে। এছাড়া জামশেদ কবীর বাকি বিল্লাহ, নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন, সালাহউদ্দিন টিপু ও আরিফ নামের পাপুল দম্পতির ৪ ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির সম্পদের হিসাব পেতে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে চিঠি দেয় দুদক।
গত ৬ জুন (শনিবার) রাতে কুয়েতের মুশরেফ আবাসিক এলাকা থেকে দেশটির অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) পাপুলকে গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে দেশটিতে মানবপাচার ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ রয়েছে। গ্রেপ্তারের পর পাপুলকে আদালতে হাজির করলে জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠান আদালত।
কুয়েতের বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, মানব ও অর্থপাচারসহ বিভিন্ন জালিয়াতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে- এমন কয়েকশত ব্যক্তির তালিকা করেছে কুয়েত সরকার। সেই তালিকা ধরেই সম্প্রতি বিতর্কিত শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে দেশটির গোয়েন্দা বিভাগ। সেই অভিযানেই গ্রেপ্তার হন বাংলাদেশের সংসদ সদস্য পাপুল।
ঢাকা/এম এ রহমান/বকুল
from Risingbd Bangla News https://ift.tt/3fBrhnK
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন