স্নেহাশিস নিয়োগী প্রাথমিক স্তরে খুদে পড়ুয়ারা কতটা ভালো চেনে , সংখ্যা? এই নিরিখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর লোকসভা কেন্দ্র উত্তরপ্রদেশের বারাণসী ও তাঁর নিজের রাজ্য গুজরাটের মেহসনা জেলাকে পিছনে ফেলে দিল পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া। চার থেকে আট বছরের শিশুদের মানসিক বোধের বিকাশের নিরিখেও বাঁকুড়ার খুদেরা মেহসনা, নালন্দা এবং বারাণসীকে পিছনে ফেলেছে। অ্যানুয়াল স্ট্যাটাস অফ এডুকেশন রিপোর্টের (অসর) ১৪তম সমীক্ষায় এমনই তথ্য উঠে এসেছে। ‘অসর ২০১৯: শৈশব’ শীর্ষক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, বাঁকুড়ায় প্রথম শ্রেণির মাত্র ১৮.৮ শতাংশ ছাত্রছাত্রী অক্ষর চেনে না। কিন্তু মেহসনাতে এমন পড়ুয়াই ৩৮%। বারাণসীতে ৪১.৯ শতাংশ। আর বিহারের নালন্দায় অর্ধেকেরও বেশি (৫৮.৯%) খুদে পড়ুয়া অক্ষর চেনে না। ১ থেকে ৯ সংখ্যা চিনতে পারে বাঁকুড়ায় প্রথম শ্রেণির ৮২ শতাংশ পড়ুয়া। মেহসনায় এই হার ৬২.৭%, বারাণসীতে ৬৮.৮ %। নালন্দা (৭৪.২) এ ক্ষেত্রে মেহসনা, বারাণসীর থেকে এগিয়ে। চার লাইনের একটি অনু্চ্ছেদ প্রথম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের পড়ার নিরিখেও বাঁকুড়া (৩০.১০%) অন্যদের পিছনে ফেলেছে। নালন্দা, বারাণসী এবং মেহসনায় প্রথম শ্রেণির যথাক্রমে ১৯.৩, ১৮.৭ ও ১০.৬৪ শতাংশ শিশু ওই অনুচ্ছেদ পড়তে পারে। তবে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের একই পাঠ্য পড়তে পারার নিরিখে বাঁকুড়ার কচিকাঁচারা (৪৬.৬%) কিছুটা পিছিয়ে মেহসনার (৫০.৩ শতাংশ) থেকে। তবে বারাণসী (৪১.৬%) ও নালন্দার (২৮.২%) থেকে বাঁকুড়া এগিয়েই। এই সমীক্ষায় আরও একটি তথ্য তাৎপর্য্যপূর্ণ। তা হল, বাবা-মা যদি শিক্ষিত হন, ইতিবাচক প্রভাব পড়ে সন্তানের উপরে। যে বাচ্চার মা যত শিক্ষিত, ক্লাসে সেই পড়ুয়া তত ভালো পড়া বুঝতে পারে, অঙ্ক কষতে পারে এবং ছবি দেখেও কোনটা কীসের, সহজে চিনতে পারে। অসর-এর এই সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, দেশের এই চারটি জেলার খুদে পড়ুয়াদের মায়েদের মধ্যে ১৮.৩ শতাংশ ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি অবধি পড়েছেন। নবম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা ২৪.২ শতাংশের। আর একাদশ বা তার বেশি পড়াশোনা করেছেন ২২.৭ শতাংশ। মায়েরা শিখলে শিখছে বাচ্চারাও। অসর-এর সমীক্ষার ফল নিয়ে কী বলছেন শিক্ষাবিদরা? রাজ্যের প্রাক্তন স্কুল শিক্ষামন্ত্রী, বাঁকুড়ারই মানুষ পার্থ দে বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে স্কুলশিক্ষার সার্বিক অবস্থাটা বরাবরই ইতিবাচক। দেশের অন্য রাজ্যের জেলাগুলির সঙ্গে হিসাব করলে এখানে পড়াশোনার মান তুলনামূলক ভালোই। শিক্ষক-শিক্ষিকারাও চেষ্টা করেন। তবে উন্নতির আরও সুযোগ রয়েছে।’ রাজ্য স্কুলশিক্ষা পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচি কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদারের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের আমলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় সাড়া জাগানো সাফল্য এসেছে। আগামী দিনে সারা দেশকে চমকে দেবে বাংলা। শিক্ষার সার্বিক পরিকাঠামো, নতুন সিলেবাস ও শিক্ষা পদ্ধতি এবং প্রশ্নের ধাঁচ ও নম্বর দেওয়ার ধরনে আমূল বদল বাংলার পড়ুয়াদের কাছে যে বেশ গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে, তা এই ফলাফলে স্পষ্ট।’ ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর এডুকেশন রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিংয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক জালালউদ্দিনের কথায়, ‘স্কুলশিক্ষায় সাফল্যের ইতিহাসে পশ্চিমবঙ্গ বহু দিনই দেশের অন্য অংশের তুলনায় কয়েক যোজন এগিয়ে। সেই ধারা বজায় রেখেই এই ফল।’ অসর-এর রাজ্য সমন্বয়কারী সজল ঘোষ জানান, দেশের ২৪টি রাজ্যের ২৬টি জেলার ১৫১৪টি গ্রামে ৩০,৪২৫টি পরিবারের ৩৬,৯৩০ জন পড়ুয়াকে নিয়ে ২০১৯ সালে এই নমুনা সমীক্ষা হয়েছে। শিশু-পিছু ২০-২৫ মিনিট সময় বরাদ্দ থেকেছে। আরও পড়ুন:
from Bangla News: বেঙ্গলি খবর, Latest News in Bengali, Breaking News In Bengali, সর্বশেষ সংবাদ | Eisamay https://ift.tt/2R6fgNs
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন