এই সময়, কলকাতা ও ব্যারাকপুর: হাইকোর্টের নির্দেশে আজ, মঙ্গলবার বেলা একটায় ভাটপাড়া পুরসভায় আস্থা বৈঠক করতে হবে পুরপ্রধানকে। সোমবার বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত ও বিচারপতি প্রতীকপ্রকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ এই আস্থা বৈঠকে রাজ্য পুলিশকে নিরাপত্তার যাবতীয় ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে স্বল্প সময়ের মধ্যে সব দলের কাউন্সিলরদের অবগত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরকে। বৈঠকে হাজির থাকতে হবে জেলাশাসককে। আস্থা বৈঠকে কী হল এবং সে ব্যাপারে তাঁর বক্তব্য মুখবন্ধ খামে বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে জমা দিতে হবে জেলাশাসককে। ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশের পর বেশ কয়েক মাসের টানাপোড়েনের পর ভাটপাড়া পুরবোর্ডের দখল কার হাতে থাকবে, আজ মঙ্গলবার তা চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা। এর আগে ২ জানুয়ারি তৃণমূল ১৯-০ ফলে বিজেপি-র চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটে জয়ী হয়। ওই বৈঠকের নোটিস চ্যালেঞ্জ করে সে দিনই হাইকোর্টে মামলা করেন বিজেপি কাউন্সিলররা। বিচারপতি অরিন্দম সিনহার সিঙ্গল বেঞ্চ সেই নোটিস খারিজ করে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে হওয়া ওই অনাস্থা বৈঠক খারিজ করে দেয়। সেই রায় চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করে তৃণমূল। বিচারপতি দত্তর ডিভিশন বেঞ্চে তৃণমূলের হয়ে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সওয়ালে বলেন, বিজেপি নোটিস চ্যালেঞ্জ করলেও বৈঠকের সিদ্ধান্ত খারিজের আবেদন করেনি। অথচ সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ে বৈঠকই বাতিল হয়েছে। ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা যার সঙ্গে থাকবে তিনিই ক্ষমতায় থাকবেন, যার সঙ্গে তা থাকবে না তাকে সরে যেতে হবে। ২ জানুয়ারির সভায় যা-ই হয়ে থাকুক, এটা স্পষ্ট যে চেয়ারম্যানের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল না। আদালত এই পর্যবেক্ষণের পরেই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নতুন করে আস্থা বৈঠক ডাকার নির্দেশ দেয়। চেয়ারম্যান ছাড়াও উত্তর চব্বিশ পরগনার জেলাশাসককে এ সংক্রান্ত পৃথক নোটিস ইস্যু করার নির্দেশ দেয় কোর্ট। হাইকোর্টের নির্দেশের পর অনাস্থা ভোটের প্রাথমিক প্রস্তুতিও সেরে ফেলেছে তৃণমূল। ঠিক হয়েছে, দুপুর একটায় ভোটাভুটি হওয়ার এক ঘণ্টা আগেই তৃণমূলের ১৯ জন কাউন্সিলর একসঙ্গে পুরসভায় ঢুকবেন। তবে তৃণমূল কাউন্সিলররা হাজির থাকার কথা বললেও ভোটাভুটিতে বিজেপির কোনও কাউন্সিলর উপস্থিত থাকবেন না বলে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ তথা ভাটপাড়ার প্রাক্তন চেয়ারম্যান অর্জুন সিং বলেন, ‘যেখানে চেয়ারম্যান ২০ জানুয়ারি অনাস্থার তলবি সভা ডেকেছেন, সেখানে নতুন করে এ সব প্রক্রিয়ার কোনও মানে হয় না। মঙ্গলবারই আমরা সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছি।’ যদিও এ দিন মধ্যমগ্রামে তৃণমূল জেলা পার্টি অফিসে বসে দলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘ভাটপাড়া পুরবোর্ডে ক্ষমতা দখল করবে তৃণমূল। দায়িত্ব পেয়েই কর্মী বেতন-সহ অন্যান্য পরিষেবার কাজ ও বিজেপির বিভিন্ন আর্থিক দুর্নীতির তদন্ত করবে তৃণমূল। বিজেপি সুপ্রিম কোর্টে গেলেও ফল ওদের বিরুদ্ধেই যাবে।’ রাজ্যে বিজেপির হাতে থাকা একমাত্র পুরসভা ভাটপাড়ায় চেয়ারম্যান অপসারণের দাবি তুলে অনাস্থা এনেছিল তৃণমূল। অনাস্থা ভোট নিয়ে গত একমাস ধরে জটিলতায় থমকে গিয়েছে পুর পরিষেবা। অর্জুন গড়ে শাসক দল এখন অনেকটাই সাবধানী। দলের নির্দেশ মেনে আজ, বেলা বারোটা নাগাদ ৩৫ আসনের ভাটপাড়ার ১৯ জন তৃণমূল কাউন্সিলর একসঙ্গে পুরসভায় হাজির হয়ে অনাস্থার পক্ষে ভোটাভুটিতে অংশ নেবেন। ৩৫ জনের মধ্যে একজন কাউন্সিলর মারা গিয়েছেন। একজন জেলে, অর্জুন সাংসদ হওয়ায় তাঁর আসনটি খালি। আর একজন বাম কাউন্সিলর রয়েছেন। আদালতের নির্দেশে আজ তলবি সভা পরিচালনা করবেন জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তী। কমিশনারেটের এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘পুরসভা ও তার আশপাশের এলাকা জুড়ে প্রচুর পুলিশ থাকবে। কাউন্সিলরদের পুরসভায় ঢুকতে যাতে অসুবিধা না হয় তা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।’ তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, ভোটাভুটি উপলক্ষ্যে ভাটপাড়ারই কোনও জায়গায় হাজির থাকবেন দলের জেলার শীর্ষ নেতারা। ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সত্যেন রায় বলেন, ‘আজ থেকে ভাটপাড়ায় আর কোনও অর্জুনের শাসন থাকবে না। শুধুমাত্র মানুষের শাসন থাকবে।’ আরও পড়ুন:
from Bengali News, Latest Bengali News, Bengali Khabar, Bengali News Headlines, বেঙ্গলি খবর https://ift.tt/2SUPWLX
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন