এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: কলেজ স্ট্রিটে জ্বলছে! জ্বলছে যাদবপুরেও! প্রতিবাদী স্লোগানের সঙ্গে শীতের সকাল-বিকেলে উত্তাপও ছড়াচ্ছে ওই জ্বলন। তারই সঙ্গে আবার কুণ্ডলী পাকিয়ে উঠছে কালো ধোঁয়া। বাতাসে আর শরীরে মিশছে বিষ। কারণ যেটা জ্বলছে, সেটা টায়ার। যা জ্বালালে এত পরিমাণে দূষিত বস্তু বাতাসে মিশে যায় যে, আর কিছু পাওয়া যাক বা না-যাক, বাতাসে বিষের কোনও খামতি থাকে না। প্রেসিডেন্সি-কলকাতা-যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে এই কাজটা যাঁরা করলেন, তাঁরা নিজেদের প্রগতিশীল বলে তো দাবি করেনই, এমনকী পরিবেশ আন্দোলনে তাঁদের অনেককে সবার আগে থাকতে দেখা যায়। ক্যাম্পাসে পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়েও তাঁরা মুখর। কোথায় গাছ কাটা হচ্ছে, কোথায় দূষিত রাসায়নিক পড়ে নষ্ট করছে পরিবেশ, সে সব নিয়েও লড়াই-সংগ্রামে বিরাম নেই তাঁদের। তবে সেই যাদবপুর-কলকাতা-প্রেসিডেন্সির পড়ুয়ারাই ধর্মঘট সফল বলে দেখাতে প্রকাশ্যে টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ করলেন। যাঁদের প্রশ্ন তোলার কথা, তাঁদের বিরুদ্ধেই উঠল অজস্র প্রশ্ন। অনেকেরই বক্তব্য, ধর্মঘট সফল হল নাকি ব্যর্থ, সে তর্ক থাকবেই। যা নিয়ে তর্ক নেই, তা হল, প্রতিবাদের পথ বাছতে গিয়ে যাদবপুর-কলকাতা-প্রেসিডেন্সির ‘সচেতন’ পড়ুয়ারা পরিবেশের কথা একটুও ভাবলেন না। এমন নয় যে, তাঁরা জানেন না। জেনেও এমন পদক্ষেপ করা কি তাঁদের বড় ব্যর্থতা নয়? প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। বুধবার ধর্মঘটের সমর্থনে পিকেটিং ও বিক্ষোভ করতে গিয়ে সাতসকালেই প্রেসিডেন্সি ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ করেন এসএফআই-সমর্থক পড়ুয়ারা। দুপুরে টায়ার জ্বালাতে গিয়ে প্রথমে ব্যর্থ হন যাদবপুরের ‘কমরেড’রা। কারণ, শুকনো জোড়া টায়ারে আগুন দিলে তা জ্বলেনি। ডিম রাখার কাগজের ট্রে এনে, এমনকী পোড়া মবিল এনেও জ্বালানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন ওই পড়ুয়ারা। পরে সন্ধ্যা নামতে পেট্রল জোগাড় করে এনে সেই ফেলে রাখা টায়ারে আগুন ধরিয়ে তবেই ক্ষান্ত হন প্রতিবাদীরা। অবশ্য সোমবারই অন্য একদল পড়ুয়া কলেজ স্ট্রিট থেকে রাজভবনের মিছিলে পরিবেশ দূষণ হবে বলেই মশাল জ্বালাতে দেননি। উদ্যোক্তাদের কেউ কেউ মশাল তৈরি করে আনলেও আলোর জন্য শেষমেশ সবাই বেছে নিয়েছিলেন মোবাইল ফোনের ফ্ল্যাশলাইট। টায়ার জ্বালিয়ে দূষণ ছাড়া আর কী পাওয়া গেল? প্রেসিডেন্সির এসএফআই নেতা শুভজিৎ সরকারের বক্তব্য, ‘টায়ার জ্বালালে যে পরিবেশ দূষণ হয়, সেটা আমরা জানি। কিন্তু একটা-দুটো টায়ার জ্বালালে আর কত দূষণ হয়? ধর্মঘট সফল করার জন্য টায়ার জ্বালানো জরুরি। না-হলে মানুষ বুঝবে কেমন করে যে, ধর্মঘট হচ্ছে?’ যাদবপুরের এসএফআই নেতা দেবরাজ দেবনাথের মন্তব্য, ‘টায়ার জ্বালানো একটা প্রতীকী ব্যাপার। রাজ্যের বক্রেশ্বরে বা দিল্লির যমুনাতে কী হচ্ছে? রাষ্ট্রের চোখের সামনেই প্রতিদিন পরিবেশ দূষণ চলছে। রাষ্ট্রই আবার মানুষে মানুষে বিভাজনকারী রাজনৈতিক দূষণ ছড়িয়ে দিচ্ছে।’ পরিবেশবিদ তথা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার ডিন সাধন ঘোষের কথায়, ‘টায়ার পোড়ানো এবং নাড়া পোড়াই তো বায়ু দূষণের মূল কারণ। নাড়া পোড়ান যাঁরা, তাঁদের অধিকাংশই অশিক্ষিত জনতা। কিন্তু হরতালের নামে যাঁরা টায়ার পোড়ালেন, তাঁরা শিক্ষিত।’ রাজ্যের পরিবেশ বিধি অনুযায়ী প্রকাশ্যে টায়ার জ্বালানো নিষিদ্ধ। এ ক্ষেত্রে পুলিশ ও পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ চাইলে আইনি পদক্ষেপ করতেই পারে। পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র অবশ্য বলছেন, ‘রাস্তার উপর কিছু হলে সেটা পুলিশের দেখার কথা। আমি চাইব, প্রতিবাদ হওয়াটা যেমন জরুরি, তেমনই জরুরি হোক প্রতিবাদের পথটাও। হিংসা ছড়িয়ে, পরিবেশের ক্ষতি করে কোনও প্রতিবাদ না-হলেই ভাল।’
from Bangla News: বেঙ্গলি খবর, Latest News in Bengali, Breaking News In Bengali | Eisamay https://ift.tt/2QAr76a
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন