বরিশালের টাইমস, জাতীয়, রাজনীতি, অর্থনীতি, সারা বাংলা, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, চাকরি, বিনোদন, সাতসতেরো, ক্যাম্পাস, অন্যান্য

Breaking

সোমবার, ১৭ জুন, ২০১৯

নির্ভয়া তহবিলের টাকায় ঢেলে সাজছে কলকাতার নারী সুরক্ষা

সুরবেক বিশ্বাসখাস কলকাতার আড়াইশোর বেশি মেয়েদের স্কুল এ বার ক্লোজ্ড সার্কিট টিভি ক্যামেরার নজরদারিতে মুড়তে চলেছে লালবাজার। একই ভাবে কলকাতা পুলিশ শহরের সাত-আটটি মেয়েদের কলেজকেও এহেন বৈদ্যুতিন নজরদারির আওতায় আনছে। সব মিলিয়ে প্রায় হাজার খানেক সিসি টিভি ক্যামেরা শহরে মেয়েদের স্কুল-কলেজগুলিতে বসাচ্ছে কলকাতা পুলিশ। এমন কোনও কলেজ বা স্কুল কলকাতা পুলিশের যে ডিভিশনের অন্তর্গত, তার সিসিটিভি-র মনিটর থাকবে সেই ডিভিশনাল অফিসে। ছাত্রীদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার কথা মাথায় রেখে মনিটরে নজর রাখার দায়িত্ব থাকবে মহিলা পুলিশ অফিসার ও কর্মীদের উপর। রিয়েল টাইম মনিটরিং বা সর্বক্ষণের নজরদারি থাকবে, যাতে সমস্যা দেখলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়।লালবাজার সূত্রে জানা যাচ্ছে, সরকারি ও বেসরকারি, দু’ধরনের স্কুল-কলেজেই এমন সুরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মূলত স্কুল-কলেজগুলির প্রধান ফটক, করিডর, ভবনের পিছন দিকের ফাঁকা ও নির্জন জায়গায় নজরদার ক্যামেরা বসানো হবে। প্রতিটি ক্যামেরাই হাই ডেফিনিশন বা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন। ছবি বুঝতে যাতে কোনও অসুবিধে না হয়, সেই জন্যই এই ব্যবস্থা। রানিকুঠির জিডি বিড়লা, বেহালার এমপি বিড়লার মতো কয়েকটি স্কুলে শিশুদের উপর শারীরিক অত্যাচারের অভিযোগ ওঠার পর কয়েকটি স্কুল নিজেদের উদ্যোগেই সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়েছিল। তার পরেও ত্রুটি আছে বলে লালবাজার মনে করলে সেই সব স্কুলে অতিরিক্ত সিসিটিভি ক্যামেরা বসবে।কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রকের ‘নির্ভয়া তহবিলের’ অধীনে ‘সেফ সিটি প্রোজেক্ট’-এর অঙ্গ হিসেবে কলকাতা শহরে নারী নিরাপত্তায় এই সব পদক্ষেপ করা হচ্ছে। ওই প্রকল্পে নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রককে সহযোগিতা করছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। নির্ভয়া তহবিল তৈরির কথা ২০১৩-র কেন্দ্রীয় বাজেটে ঘোষণা করেন তদানীন্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। ২০১২-র ডিসেম্বরে দিল্লিতে একটি বেসরকারি বাসে গণ ধর্ষণ ও পাশবিক অত্যাচারের শিকার হন এক তরুণী। পরে তিনি মারা যান। সুবিচারে সরব জনগণই তাঁর নাম দেয় নির্ভয়া।লালবাজার সূত্রের খবর, প্রথম পর্যায়ে এই সব বন্দোবস্ত করতে ১৮০ কোটি টাকার কিছু বেশি খরচ হবে। কেন্দ্র যার ৬০ শতাংশ দেবে, ৪০ শতাংশ দেবে রাজ্য। কলকাতায় এখন এই প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ সদ্য শুরু হয়েছে।কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা ‘এই সময়’-কে বলেন, ‘আমাদের কাছে সব চেয়ে অগ্রাধিকার হল, শহরে মহিলাদের নিরাপত্তা। জরুরি ভিত্তিতে এই প্রকল্পের কাজ হচ্ছে।’কলকাতা পুলিশের হিসেবে, ৩১২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই শহরে জনসংখ্যা ৪৬ লক্ষ ও নারী-পুরুষের অনুপাত ৯০৮:১০০০।কলকাতায় মহিলা থানার সংখ্যা এখন ন’টি। অপরাধের শিকার কোনও মহিলা কিংবা কোনও শিশু বা নাবালিকার শুশ্রূষার জন্য ন’টি মহিলা থানার প্রতিটিতে পেশাদার ও উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স নিয়োগ করছে লালবাজার। পেশাদার নার্সদের পাশাপাশি কলকাতা পুলিশ পেশাদার কাউন্সেলর বা পরামর্শদাতাও নিয়োগ করবে। ওই কাউন্সেলররা নিপীড়িত মহিলা বা নাবালিকা, শ্বশুরবাড়িতে অত্যাচারিত বধূ, দাম্পত্য সমস্যায় জর্জরিত মহিলা, ধর্ষণের শিকার কেউ কিংবা পকসো মামলায় অপরাধের শিকার কোনও শিশু বা নাবালিকাকে ভয় বা মানসিক জড়তা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবেন।লালবাজারের এক কর্তা জানান, মহিলারা এখন নেট দুনিয়া বিভিন্ন অপরাধের শিকার হচ্ছেন। স্মার্টফোন এবং ফেসবুক, টুইটার ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো সামাজিক মাধ্যম বেশির ভাগ মানুষ ব্যবহার করেন বলে এই ধরনের অপরাধের সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছে। সেই জন্য ন’টি মহিলা থানার সব ক’টিতে আধুনিক বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম-সহ সাইবার ল্যাব গড়া হচ্ছে। পুলিশের আশা, এর ফলে সাইবার অপরাধীদের শনাক্ত করতে বা তাদের হদিস পাওয়া যাবে অল্প সময়ের মধ্যে।কলকাতায় পার্ক স্ট্রিটে গাড়িতে গণধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটেছে। ২০১২-র ওই ঘটনার বছর দেড়েকের মধ্যে কলকাতার অদূরে উত্তর ২৪ পরগনার কামদুনিতে এক ছাত্রীকে গণধর্ষণ করে খুন করা হয়। বছর দু’-তিনেক আগে কলকাতার একাধিক স্কুলে কয়েক জন বাচ্চা মেয়ে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। কলকাতা পুলিশের বক্তব্য, ভিন রাজ্য ও বিদেশের বহু ছাত্রী কলকাতা ও তার আশপাশে থেকে পড়াশোনা করেন। অন্য রাজ্য থেকে ও পড়শি দেশ থেকে অনেক মহিলা এই শহরে চিকিৎসা করাতে আসেন। বাইরে থেকে আসা ওই সব ছাত্রী ও রোগিণীর সুরক্ষার বিষয়টি শহরের পুলিশ-প্রশাসনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

from Eisamay http://bit.ly/2RgvBh4

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Pages