মৈত্রেয়ী ভট্টাচার্য ■ কলকাতারূপক মজুমদার ■ বর্ধমানকলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বন্ধ গেটের দাঁড়াল হলুদ ট্যাক্সি। তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল। গেটের অন্য প্রান্তে তখন নজরদারিতে ডাক্তারি পড়ুয়া, জুনিয়র ডাক্তাররা। রোগী বা পরিজনের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছেন।ট্যাক্সি থেকে নেতিয়ে পড়া এক শিশুকে নিয়ে গেটের কাছে মহিলাকে আসতে দেখেই এগিয়ে যান জুনিয়র ডাক্তাররা। পেট খারাপে নেতিয়ে পড়েছে এক বছরের ইয়াসফা খাতুন। স্থানীয় ডাক্তারের ওষুধে কাজ হয়নি। তাই ‘স্ট্রাইক’ জেনেও সরকারি হাসপাতালে ছুটে এসেছিলেন মা আনা বেগম আর পিসি আসিয়া বেগম। গেটের সামনে দাঁড়িয়েই ইয়াসফাকে পরীক্ষা করে দেখে এক স্নাতকোত্তর পড়ুয়া বলেন, ‘এখনই পিজিতে নিয়ে যাও। ওখানে রোগী ভর্তি হচ্ছে। কথা বলে নিচ্ছি আমরা।’বহির্বিভাগ থেকে বেরিয়ে আসছিলেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দুই জুনিয়র ডাক্তার জুলফিকার হুসেন, অম্বর রায়। পা ভাঙা এক বৃদ্ধাকে পড়ে থাকতে দেখে নিজেরাই এগিয়ে গিয়ে কথা বলেন। সব শুনে পাঁজাকোলা করে তুলে বৃদ্ধাকে জরুরি বিভাগে ভর্তি করেন।জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্মঘটের জেরে যখন একের পর এক রোগী ফিরে যাচ্ছেন সরকারি হাসপাতাল থেকে, শুক্রবার কিন্তু এমন কিছু ব্যতিক্রমী মানবিক দিকও চোখে পড়েছে। যা প্রমাণ করল, রোগীদের সঙ্গে বৈরিতা নেই চিকিৎসক-জুনিয়র ডাক্তারদের।শুক্রবার কেমোথেরাপি নিতে আসা তিনজনকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ডে-কেয়ারে ভর্তি করে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জুনিয়র ডাক্তার বলেন, ‘শুধু কেমোথেরাপির পেশেন্টদেরই নয়, খুব অসুস্থ রোগীদেরও ভর্তি করার ব্যবস্থা করেছি। আমাদের যতটা অমানবিক বলা হয়, আমরা ততটা অমানবিক নই।’কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে খবর, শুক্রবারের ডামাডোলের মধ্যেও পাঁচজন মুমূর্ষু রোগীকে ভর্তি করা হয়েছে। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের ভর্তি করে রক্তদানের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়। অননলাইনে বহির্বিভাগের টিকিট কেটে আসা রোগীদের দেখানোর ব্যবস্থাও করেন হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্তারা। উপাধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, ‘অনলাইনে বহির্বিভাগের টিকিট কেটে আসা আট জনের মতো রোগীকে সিনিয়র ডাক্তারদের কাছে তাঁদের ডিপার্টমেন্টে পাঠিয়ে দেখানোর ব্যবস্থা করানো হয়েছে। শনিবারও যদি কেউ অনলাইনে বহির্বিভাগের টিকিট কেটে দেখাতে আসেন, সে ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা করা হবে।’বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তারদেরও অনেকে আজ রোগীদের ফেরাতে পারেননি। বহির্বিভাগের বদলে কখনও ধর্নামঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে কখনও শিশুবিভাগের সামনে বসে রোগী দেখেছেন, ওষুধ দিয়েছেন। তবে হাসপাতালের সরকারি টিকিটে নয়। সাদা কাগজে।জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে এ নিয়ে মুখ্য খোলা না-হলেও উপাধ্যক্ষ উৎপল দাঁ বলেন, ‘আমাদের কানে এসেছে ওরা রোগী দেখেছে। তবে কোলে করে রোগীকে নিয়ে গিয়ে ভর্তির যে ছবি দেখলাম, তাতে আমারও মনটা ভরে গিয়েছে। এটাই একজন চিকিৎসকের মূল ধর্ম। আগে অসুস্থ, মুমূর্ষু মানুষকে বাঁচাতে হবে। আমরা ওদের দাবির সঙ্গে আবারও সহমত পোষণ করছি। পরিষেবা দিয়ে ওরা আন্দোলন করুক। নিরাপত্তা দিতেই হবে। এ দাবি আমাদেরও।’
from Eisamay http://bit.ly/2WIOsaB
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
Author Details
I am an Executive Engineer at University of Barishal. I am also a professional web developer and Technical Support Engineer.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন