স্নেহাশিস নিয়োগীরাজ্যে পরিবর্তনের পর বিভিন্ন শিক্ষা পর্ষদ, সংসদ সমবায়, কৃষি সমিতি এমনকী স্কুল ম্যানেজিং কমিটিরও ভোটাভুটির পাট চুকিয়ে দিয়েছে শাসক দল। এই নির্বাচন না-হওয়ায় তৃণমূল স্তরে জনমতের আভাস পাওয়াই বন্ধ। ব্যাহত জনসংযোগ। শাসক বা বিরোধী, কোনও দলের নেতারাই বুঝতে পারছিলেন না নিচুতলার মন।বিশেষ করে সমস্যায় পড়েছে শাসক দল। তাদের কাছে অজানা ছিল ‘গোকুলে কে বাড়ছে’! সেই বুঝতে না-পারাই এখন কাল হয়েছে তৃণমূলের।কারণ, বিভিন্ন শিক্ষা পর্ষদ, সংসদ এবং স্কুল পরিচালন সমিতির ভোটে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও মনোভাবের আভাস পাওয়া যায়। একইসঙ্গে সমবায় ও কৃষি সমিতির ভোটের মাধ্যমে আমআদমির সঙ্গে জনসংযোগ গড়ে ওঠে। কিন্তু এই সব নির্বাচনের পাট চুকিয়ে দেওয়ায় যেমন রাজনৈতিক ক্ষতি হয়েছে, একই ভাবে তৃণমূল স্তরে জনমত কোন দিকে যাচ্ছে, তার পূর্বাভাসও অজানা থেকে গিয়েছে। পালাবদলের সরকারের আট বছর উত্তীর্ণ। তার পরও এই সব স্বশাসিত সংস্থার পরিচালন সমিতিতে নির্বাচনের চিন্তাভাবনা দূর অস্ত্। বরং এখন শিরে-সংক্রান্তি অবস্থা।অথচ বাম আমলে ছিল সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র। সাড়ে তিন দশকের বাম শাসনে রসায়নের বিভিন্ন কারণের সঙ্গে একটি কারণ ছিল সংশ্লিষ্ট পর্ষদ, সংসদ এবং সমবায় সমিতির নিয়মিত ভোট করে যাওয়া। তাতে যেমন রাজনৈতিক বুনিয়াদ শক্ত হত, সেই সঙ্গে টের পাওয়া যেত আমজনতা কী ভাবছেন।রাজ্যের ২০টি জেলা বিদ্যালয় প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ (ডিপিএসসি) ও পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদে সদস্য বাছাইয়ে শেষবার ভোট হয়েছিল ২০১০ সালে। তার পর থেকেই ভোটাভুটি বন্ধ। একই ভাবে উচ্চ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষক-শিক্ষিকারাও মধ্যশিক্ষা পর্ষদের জেলাভিত্তিক প্রতিনিধি নির্বাচন করতেন। তারা আবার ভোট দিতেন কর্মসমিতি (ইসি) গঠনে। ২০১১ সালের শেষের দিকে সেই কমিটির মেয়াদ ফুরিয়ে যায়। তারপর থেকে নির্বাচন নৈব নৈব চ। বরং বছরের পর বছর ধরে পর্ষদে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে সব নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে। শেষ অবধি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকেই পর্ষদ সভাপতি নিয়োগ করে দায় সেরেছে।এখানেই শেষ নয়।স্পনসর্ড স্কুলের ১৯৭২ সালের আইন বদলে বিধানসভায় ২০১৪ সালে সংশোধনী আনা হয়েছে। তাতে ১২ হাজারের বেশি স্কুল পরিচালন সমিতিতে শিক্ষক, অভিভাবক এবং শিক্ষাকর্মী বাছাইয়ের প্রথাও ডকে উঠেছে। সবই এখন মনোনীত। তাতেও স্বস্তি নেই। শাসকের কোন্দলে পূর্ব মেদিনীপুর-সহ একাধিক জেলায় স্কুলে-স্কুলে প্রশাসকরাই ভরসা। একই হাল উচ্চ মাধ্যমিক সংসদেরও।রাজ্যের প্রাক্তন স্কুল শিক্ষামন্ত্রী পার্থ দে-র কথায়, ‘ডিপিএসসি, রাজ্য প্রাথমিক ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদ, উচ্চ মাধ্যমিক সংসদ গঠন হত শিক্ষক ও কর্মীদের ভোটাভুটির মাধ্যমে। এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট আইনও ছিল। কিন্তু এই সব সংস্থায় এখন শাসক ছাড়া কারও জায়গা নেই। মেয়াদ শেষের পরও দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসক ও মনোনীত সভাপতিদের রাখা যায় না।’বাদ নেই স্টেট কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক, কনফেড, বেনফেড এবং ডব্লিউএসসিএআরডি-র মতো প্রথম সারির রাজ্য ও জেলাভিত্তিক সমবায় ব্যাঙ্ক সমিতির পাশাপাশি ছ’হাজারের বেশি কৃষি উন্নয়ন সমিতিও।সংশ্লিষ্ট সমিতিতে মেয়াদ উত্তীর্ণের পরও সমবায় আইনকে সম্পূর্ণ এড়িয়ে বেআইনি ভাবে স্পেশ্যাল অফিসার বা প্রশাসক নিয়োগ করা হচ্ছে। উদ্যোগী পরিচালকের অভাবে ছ’হাজার কৃষি সমিতির মধ্যে দু’হাজার ধুঁকছে। আরও দু’হাজার টিমটিম করছে। কিন্তু কোনও সংস্থাতেই ভোটাভুটি হয় না। অথচ শাসকের অন্দরের একাংশের মত, এই সব সমবায় ও কৃষি সমিতি মানুষের গণ-আন্দোলন ও আর্থ-সামাজিক লড়াইয়ের সুফল।এ সব অভিযোগ খারিজ করে রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায়ের দাবি, ‘হাইকোর্টে মামলা ঝুলে থাকায় স্টেট কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক, কনফেড এবং বেনফেডের মতো সংস্থায় ভোট করতে পারছি না। সমবায় ও কৃষি সমিতিগুলি চাইলে ভোট করা হবে!’
from Eisamay http://bit.ly/2YPq57S
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
Author Details
I am an Executive Engineer at University of Barishal. I am also a professional web developer and Technical Support Engineer.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন