বরিশালের টাইমস, জাতীয়, রাজনীতি, অর্থনীতি, সারা বাংলা, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, চাকরি, বিনোদন, সাতসতেরো, ক্যাম্পাস, অন্যান্য

Breaking

শুক্রবার, ২ জুন, ২০২৩

তাপ প্রবাহের মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্যুৎ ঘাটতি মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করছে

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ তাপ প্রবাহের মধ্যে চাহিদার ২৫ভাগের বেশী বিদ্যুৎ ঘাটতির ফলে দক্ষিণাঞ্চলের কোটি মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। সরকারীÑবেসরকারী হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবা চরম বিপর্যয়ের কবলে। জেলা সদর থেকে উপজেলা পর্যায়ের সরকারী হাসপাতালগুলোতে বিদ্যুতের অভাবে জরুরী অস্ত্রপচারও ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতালের  বেডে রোগ যন্ত্রনার সাথে দু:সহ গরমে অনেক রোগীর প্রাণবায়ু বেরিয়ে যাবার উপক্রম। শিল্প ও ব্যবসা-বানিজ্যে বিপর্যয় ভয়াবহ আকার ধারন করছে। দক্ষিণাঞ্চলের একাধিক ওষুধ শিল্প প্রতিষ্ঠান ছাড়াও টেক্সটাইল, পাটকল এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদন ঘাটতিতে বিপর্যস্ত। অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান শ্রমিক ছাটাই করতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে প্রতিদিন কমপক্ষে অর্ধশত কোটি টাকার উৎপাদন ঘাটতি নিয়ে শিল্প প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ধুকছে। বিগত ৩টি বছরের করোনা মহামারী সংকট কাটিয়ে ব্যবসায়ীরা একটু ঘুরে দাঁড়াবার চেষ্টার মধ্যেই দু:সহ তাপ প্রবাহের সাথে বিদ্যুৎ ঘাটতি পরিস্থিতিকে চরম বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। দু:সহ গরমের সাথে দিন রাতের লোডশেডিং এ দোকানপাটে ক্রেতাদের আগমন হ্রাস পাওয়ায় হতাশ ব্যবসায়ীদের এখন মাথায় হাত।
বরিশালে প্রায় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপ প্রবাহের মধ্যে চাহিদার ২৫ ভাগেরও বেশী বিদ্যুৎ ঘাটতি জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলছে। শুক্রবার জুমার নামাজের সময়ও বরিশাল মহানগরী সহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ রেশনিং-এ মুসুল্লীদের অবামনবিক দর্ভোগ ছিলো বর্ণনার বাইরে। পশ্চিম জোন বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানী-ওজোপাডিকো’র শহর এলাকার চেয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলোর গ্রাম এলাকায় বিদ্যুৎ ঘাটতি আরো বেশী।
এদিকে কয়লা সংকটে দেশের অন্যতম বৃহৎ পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ৩ জুন থেকে বন্ধ করে দেয়ার সময় নির্ধারিত রয়েছে। ফলে জাতীয় গ্রীডে বিদ্যুৎ ঘাটতি বৃদ্ধির রেশ ধরে দক্ষিণাঞ্চলেও তার বিরুপ প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি এ অঞ্চলের সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনগুলোতে ভোল্টেজ সংকটও প্রকট হবার আশংকার কথা বলছে দায়িত্বশীল মহল। ফলে গ্রাহক পর্যায়েও ভোল্টেজ সংকটে বিড়ম্বনা আরো বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। অপরদিকে বরিশাল অঞ্চলে ভোলার বেসরকারী ২২৫ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি কারিগরি ত্রুটির কারণে গত প্রায় দু মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। গ্যাস ভিত্তিক এ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হবার পরে এখন মেরামত ও সংরক্ষন কাজ বন্ধ থাকায় সারাদেশের সাথে দক্ষিণাঞ্চলেও ব্যাপক বিরুপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।
চাহিদার তুলনায় সরবরাহ ঘাটতির ফলে বরিশাল মহানগরী সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে গত সপ্তাহ খানেক ধরেই পর্যায়ক্রমে ঘন্টার পর ঘন্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ সঞ্চালন কোম্পানী-পিজিসিবি ও পশ্চিম জোন বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানী ওজোপাডিকো’র একাধিক সূত্রের মতে, বরিশাল মহানগরীসহ দক্ষিণাঞ্চলে পিক আওয়ারে প্রায় সোয়া ৪শ মেগাওয়াট এবং দিনের পূর্ণ চাহিদার সময়ে প্রায় পৌনে ৪ শ মেগাওয়াট চাহিদার মধ্যে গত কয়েকদিন ধরে ২৫-৩৫% পর্যন্ত বিদ্যুৎ রেশনিং করতে হচ্ছে।
মূলত জ¦ালানী সংকটে দেশের কয়েকটি বড় মাপের উৎপাদন ইউনিট বন্ধ থাকায় বরিশাল সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহে রেশনিং করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে পিজিসিবি এবং ওজোপাডিকোর দায়িত্বশীল মহল।
বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলে তাপমাত্রার পারদ গত কয়েক দিন ধরেই ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসের কাছাকাছি। গত প্রায় ১০ দিন এ অঞ্চলে কোন বৃষ্টির দেখা নেই। চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমে গত মধ্য এপ্রিলে বরিশালে তাপমাত্রার পারদ সর্বকালের সর্বোচ্চ ৪০ ডিগ্রীর কাছে পৌঁছার মধ্যেও ব্যাপক বিদ্যুৎ ঘাটতি অনেকটা মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিল। এমনকি এপ্রিলের প্রথম দিন থেকে পরবর্তী ১৫ দিনে বরিশালে তাপমাত্রার পারদ ১৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছিল। আবহাওয়া বিভাগের মতে, চলতি মাসে বরিশালে সর্বোচ্চ ৩১.৭ ডিগ্রীর স্থলে শুক্রবারও তাপমাত্রার পারদ প্রায় ৩৭ ডিগ্রীতে ছিল। যা এ সময়ের স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে প্রায় ৬ ডিগ্রী ওপরে।
উত্তপ্ত আবহাওয়ার সঙ্গে লোডশেডিং,  বিপর্যস্ত নগরজীবন
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ একদিকে উত্তপ্ত আবহাওয়া অন্যদিকে চলমান লোডশেডিং এ  বরিশালের নগরজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে এলাকাভেদে গড়ে ৩ থেকে ৫ ঘণ্টা ধরে লোডশেডিং হচ্ছে নগরীতে। নগরীর বাইরে লোডশেডিং এর মাত্র আরও বেশি।  শিশু ও বয়ষ্করা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন অনেকেই। তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রীর উপরে থাকায় গরমে মানুষ হাঁসফাঁস করছে।
নগরীর বগুরা রোডের মুন্সি গ্যারেজ এলাকার বাসীন্দা ব্যাংক কর্মকর্তা আবুল কালাম। আজকের পরিবর্তনকে তিনি বলেন, আজ ছুটির দিনে লোডশেডিং একটু কম। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে দিন রাত মিলিয়ে ৪/৫ ঘন্টা লোডশেডিং হচ্ছে। আমরা বরিশাল নগরীর বাসীন্দারা এরকম দীর্ঘ সময়ের লোডশেডিং এ  অভ্যস্ত না।
তিন বছর আগে উৎপাদনে আসার পর এই প্রথম পুরোপুরি বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের। এর আগে ডলার সংকটে কয়লা না কিনতে পারায় রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রও দুই দফা বন্ধ হয়েছিল। পায়রায় ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিটের একটি ২৫ মে বন্ধ করা হয়। ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন বাকি আরেকটি ইউনিট চলবে ২ জুন পর্যন্ত। কয়লা না থাকায় সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ হবে দেশের বৃহত্তম এ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি। বরিশালে শুক্রবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ৬  ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা হিউমিডিটির কারণে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অনুভূত হচ্ছে। অব্যাহত রয়েছে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপ প্রবাহ। বরিশাল আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক প্রনব কুমার বলেন, বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও বরিশালে বৃষ্টি হচ্ছে না। আর কাল বৈশাখীর কারনে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হলেও গরম বেশী একটা কমবে না। আষাঢ়ের প্রথম ছাড়া তাপমাত্রা স্বাভাবিক হবে না।

The post তাপ প্রবাহের মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্যুৎ ঘাটতি মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করছে appeared first on ajkerparibartan.com.



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Pages