এমতাবস্থায় আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে হবে ৩৫০ কোটি ডলার। আর পরের অর্থবছর ২০২৪-২৫ সময়ে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৪০২ কোটি ডলার। এ ছাড়া ২০২৯-৩০ অর্থবছরে ঋণ পরিশোধ করতে সর্বোচ্চ ৫১৫ কোটি ডলার খরচ হবে। অবশ্য এর পর থেকে ঋণ পরিশোধের চাপ কিছুটা কমে আসবে। অর্থ বিভাগ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সরকারের ত্রিবার্ষিক বাজেট পরিকল্পনায়ও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের এমন প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। গত এক দশকে বাংলাদেশ অনেক বৃহৎ অবকাঠামো নির্মাণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু রেলসংযোগ, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ, বিমানবন্দর তৃতীয় টার্মিনাল, পায়রা সমুদ্রবন্দর, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইত্যাদি। যদিও পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে নিজস্ব অর্থায়নে। বাকি প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে বিদেশি ঋণ নেওয়া হয়েছে। সেসব ঋণের গ্রেস পিরিয়ড এখন শেষের পথে। এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ঋণ পাওয়ার জন্য যেমন সক্ষমতা অর্জন করতে হয়, তেমন এই ঋণ পরিশোধ করাটাও এক ধরনের চাপ। তবে অর্থনীতির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও আর্থিক খাতের সুশাসন যে কোনো দেশের জন্য বিদেশি ঋণ পরিশোধে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। আমাদের দেশের আর্থিক কাঠামো দুর্বল নয়। তবে এ দেশের আর্থিক খাতে যেসব ঘটনা ঘটে সেগুলো খুবই স্পর্শকাতর। এতে অর্থনীতির ভিত দুর্বল হয়ে যায়। এ ছাড়া বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের সরকারি চাপ আসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর। ফলে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথ আরও সুগম করতে হবে।’ ২০২৬ সালের পর বাংলাদেশ যখন চূড়ান্তভাবে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে তখন এ চাপ এমনিতেই বাড়বে বলে তিনি মনে করেন। এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল কয়েকদিন আগে বাংলাদেশের জন্য ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে, যার প্রথম কিস্তি ছাড়ও করা হয়েছে। এদিকে চলতি অর্থবছর বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ উন্নয়নশীল দেশ ও সংস্থাগুলোর কাছ থেকে আরও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ঋণ পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। পূর্বে শুরু হওয়া বড় ঋণগুলোর গ্রেস পিরিয়ড শেষ হবে আগামী বছরের মধ্যে। ফলে ২০২৪ সালের মাঝামাঝিতে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়বে প্রায় দ্বিগুণ হারে। ইআরডির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন ঋণচুক্তি না হয়ে শুধু পাইপলাইনে থাকা প্রতিশ্রুতি থেকে ঋণ মিললে ডলারে আগামী কয়েক বছরে ঋণ পরিশোধে কী পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হবে তা দেখানো হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। চলতি অর্থবছর সবমিলিয়ে ২৭৮ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হবে। প্রতি বছরই এরপর সেটা বাড়বে। গত কয়েক বছরে চীন, রাশিয়া ও ভারতের কাছ থেকে নেওয়া কয়েকটি বড় অঙ্কের ঋণ এ চাপ আরও বাড়াবে। এ ছাড়া গত ছয় বছরে বিদেশি ঋণ পরিশোধের পরিমাণও বেড়েছে। সামনে ঋণ পরিশোধের এ চাপ আরও বাড়বে। কারণ আগামী তিন বছরেই ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বর্তমান সময়ের চেয়ে বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যাবে। মূলত বিভিন্ন প্রকল্পে চীন ও রাশিয়া থেকে নেওয়া বাণিজ্যিক ঋণ পরিশোধের রেয়াতি সময় (গ্রেস পিরিয়ড) আগামী দেড় থেকে তিন বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যাচ্ছে। তখন স্বাভাবিক নিয়মেই কিস্তি পরিশোধের চাপ বাড়বে। ইআরডির তথ্যমতে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিদেশি ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ছিল মাত্র ১১৭ কোটি ডলার। এর তিন বছর পর ২০২১-২২ অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ২০১ কোটি ডলার। এর মধ্য দিয়ে গত অর্থবছরে প্রথমবারের মতো বার্ষিক ঋণ পরিশোধ ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। ২০২৩-২০২৪ সালে এটা ৩৫০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। জানা গেছে, এক দশকে এই তিন দেশের কাছ থেকে সবমিলিয়ে ৩ হাজার ৬২৮ কোটি ডলার ঋণ নেওয়ার চুক্তি হয়েছে, বর্তমান বাজারদরে টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে চীনের ১২ প্রকল্পে ১ হাজার ৭৫৪ কোটি ডলার, রাশিয়া রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ১ হাজার ১৩৮ কোটি ডলার এবং ভারত তিনটি লাইন অব ক্রেডিটে (এলওসি) ৭৩৬ কোটি ডলার দিচ্ছে। বিশাল অঙ্কের এই বিদেশি ঋণ পরিশোধের জন্য বাংলাদেশকে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। এ জন্য বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
Home
Unlabelled
বৈদেশিক ঋণ দ্বিগুণ শোধ করতে হবে আগামী বছর
বৈদেশিক ঋণ দ্বিগুণ শোধ করতে হবে আগামী বছর
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
Author Details
I am an Executive Engineer at University of Barishal. I am also a professional web developer and Technical Support Engineer.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন